ময়ূখঠাকুর চক্রবর্তী, পার্থপ্রতিম ঘোষ ও রঞ্জিত সাউ, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সঙ্গে এ বার ভিন্ রাজ্যের পুলিশের সংঘাতের অভিযোগ সামনে এল। ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস বিধায়কদের গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে গিয়ে অসম ও দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি-কে (West Bengal CID) বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি (BJP) শাসিত অসম এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের (Delhi Police) বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় নতুন করে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। 


পুলিশে-পুলিশে সংঘাত!


ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের (Jharkhand Alleged Political Coup Attempt) গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি। আর সেই নিয়েই অসমের বিজেপি শাসিত সরকারের পুলিশ এবং অমিত শাহের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বাধল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের। 


ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার জোট সরকার ফেলে দিতেই তিন কংগ্রেস বিধায়ককে অগ্রিম ৪৯ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল কিনা, এর নেপথ্যে বিজেপি রয়েছে কিনা, প্রশ্ন ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে। তার উত্তর খুঁজতে নেমেছে সিআইডি। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, ধৃত বিধায়করা গুয়াহাটি গিয়ে বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী এবং নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘনিষ্ঠ সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।


গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এই সিদ্ধার্থই ঝাড়খণ্ডের বিধায়কদের টাকা নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী মহেন্দ্র আগরওয়ালের লালবাজারের অফিসে আসতে বলেছিলেন। সেই মতো এক সঙ্গীকে পাঠিয়ে এই অফিস থেকেই টাকা নিয়ে গেছিলেন ঝাড়খণ্ডের ৩ বিধায়ক।


আরও পড়ুন: 


এই ঘটনার তদন্তে নেমেই হাওড়া আদালতের সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে দিল্লির মতিবাগের আনন্দনিকেতনে সিদ্ধার্থ মজুমদারের বাড়িতে তল্লাশিতে যান সিআইডি অফিসাররা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, তল্লাশি শুরুর ঠিক আগেতাঁদের দিল্লির সাউথ ক্যাম্পাস থানায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে দিল্লি পুলিশ। আবার দিল্লি পুলিশের দাবি, সার্চ ওয়ারেন্টে তদন্তকারী অফিসার বা IO হিসেবে যাঁর নাম ছিল তিনি আসেননি। এই অবস্থায়, সার্চ করতে দেওয়া সম্ভব নয়।


কিন্তু সিআইডি জানিয়েছে, দিল্লিতে যাওয়া অফিসারের কাছে, তদন্তকারী অফিসারের দেওয়া অনুমোদনের চিঠি রয়েছে।সিআইডি-র অতিরিক্ত ওসি অরিজিৎ ভট্টাটার্য বলেন, ‘‘আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমাদের অথোরাইজ করেছে...আমাদের আটক করা হয়নি, আমরা ওয়েট করছি।’’ এমন পরিস্থিতিতে জট কাটাতে দিল্লি গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একজন ADG এবং একজন IG পদমর্যাদার অফিসার।


অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডের বিধায়কদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে বিজেপি শাসিত অসমের রাজধানী গুয়াহাটিতে পৌঁছয় সিআইডি-র আর একটি টিম। সেখানেও তাদের আটক করা হয় বলে অভিযোগ। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, তদন্তে জানা গিয়েছে, গুয়াহাটি বিমানবন্দরে নামার পর, ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস বিধায়কদের অসমের বিজেপি সরকারের তরফে গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। সেই বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতে, এদিন গুয়াহাটি বিমানবন্দরে যান সিআইডি-র চার জন অফিসার। অভিযোগ, অসম পুলিশ এসে তাঁদের জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।


এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘সিআইডিকে আটকে রাখা নয়, টাইট দেওয়া উচিত। অন্য রাজ্যে বেআইনি কাজ চলে না। আবারও কোনও রাজ্যে এরকম গেলে, এটাই করা হবে।’’ বুধবার বিষয়টি লোকসভাতেও উত্থাপন করেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। 


বাংলার সিআইডি-কে তদন্তে বাধা!


এদিকে, লালবাজারের বিকানের বিল্ডিংয়ে যে ব্যবসায়ীর অফিস থেকে ঝাড়খণ্ডের বিধায়কদের টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেই মহেন্দ্র আগরওয়ালকে আটক করেছে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, ভবানীভবনে অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে এসএসকেএম-এ নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক পরীক্ষার পর, তাঁকে ফের নিয়ে যাওয়া হয় ভবানীভবনে।