ভেলোরের বেশ কয়েকটি ম্যারেজ হলে পুলিশের ক্যাম্প বসেছে। স্থানীয় ত্রাণ দফতর থেকে ফেরার পাস দেওয়া হয়েছে ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশার যে সব বাসিন্দারা চিকিৎসা বা অন্য কারণে ভেলোরে এসে আটকে পড়েছেন, তাঁদের। এখানকার বাঙালিরা সেখানে পাসের জন্য যোগাযোগ করলে তাঁদের বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের পাস এখন দেওয়া হচ্ছে না, হোটেলে থাকুন, যখন দেওয়া হবে জানানো হবে। স্থানীয় নেতাজি স্টেডিয়ামে ক্যাম্প করে বিহারের লোকজনদের পাস দেওয়া হচ্ছিল। অন্তত বিহার পর্যন্ত আসার ট্রেন ধরার জন্য সারা রাত সেখানে লাইন দেন অনেকে। কিন্তু পাসের ব্যাপারে কিছু জানায়নি স্থানীয় প্রশাসন। বেলা নটার পর পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাঁদের তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
বাঙালিরা পাসের জন্য এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, হোটেলে পাস আসবে কিন্তু স্পষ্ট কোনও তথ্য নেই। স্থানীয় জেলা শাসকও সদুত্তর দিতে পারছেন না। ভেলোরের গাঁধী রোডের বাঙালিদের কথা ধরুন। এক একটি ট্রেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ১,২০০ জন করে। এখানকার দু’চারটি হোটেলের বিশজনের মত বাঙালি পাস পেয়েছেন। ত্রাণ দফতরের লোক বাইকে করে এসেছেন, নাম ধরে ডেকে পাস দিয়েছেন। কিন্তু বাকিরা কবে ফিরবেন তার নিশ্চয়তা নেই। তামিলনাড়ু সরকারের ওয়েবসাইটে অনলাইনে সবাই বাড়ি ফেরার জন্য নাম রেজিস্ট্রি করেছেন। স্থানীয় নোডাল অফিসার অতুল্য মিশ্র আশ্বাস দিচ্ছেন, ব্যবস্থা হবে। রেল যদিও ট্রেনের ব্যবস্থা করছে, তবে রিকুইজিশন দেবে রাজ্য। নতুন ট্রেনের ব্যবস্থা কবে হবে সে ব্যাপারে কারও কাছে খবর নেই।
এর মধ্যে কাজে নেমে পড়েছেন ট্রাভেল এজেন্টরা। তাঁরা ডিএম অফিস থেকে পাস বার করছেন সড়ক পথে কলকাতা আসার জন্য। ভেলোর থেকে কলকাতা দূরত্ব প্রায় ১,৮০০ কিমি। ছোট গাড়ি, যাতে ২ জন যেতে পারে, তার ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ২৬ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে টোল আর পারমিটের খরচ। একটু বড় গাড়িতে কিলোমিটার প্রতি রেট ৩৬-৪০ টাকা। ১৩ সিটার বাসে পারমিট দেওয়া হচ্ছে ১০ জনের জন্য। এ জন্য দেড়লাখ টাকা থোক নিচ্ছে স্থানীয় পরিবহণ দফতর। আর পুশব্যাক রকেট বাস সাড়ে চার লাখ টাকা চাইছে, ৬৫ সিটের বাসে যেতে পারবেন ৩০ জন। উপায়ান্তর না থাকায় এভাবে ফিরে আসতে অনেক বাঙালিই বাধ্য হচ্ছেন। রোজ অন্তত ১২ থেকে ১৫টা গাড়ি এভাবেই ভেলোর ছাড়ছে বাঙালিদের নিয়ে।
ঝাড়খণ্ডের লোকেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাথা পিছু ২,০০০ টাকা করে ক্যাশ ট্রান্সফার করেছে রাজ্য সরকার, হোটেল ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে। অভিযোগ, বাঙালিরা কিছুই পাননি। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশার মানুষ বেরিয়ে গিয়েছেন নিজের নিজের রাজ্যের দিকে। পড়ে রয়েছেন শুধু হাজার সাতেক বাঙালি। তাঁরা চাইছেন, এই মুহূর্তে আরও অন্তত ৪টি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হোক। যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরতে চাইছেন তাঁরা।