পটনা: বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে ভেঙে পড়েছে একের পর এক সেতু। বিহারে আবারও ভেঙে পড়ল নির্মীয়মান একটি সেতু। চার লেন বিশিষ্ট সেতুটির নির্মাণকার্য চলছিল গত কয়েক বছর ধরে। আগেও ভেঙে পড়েছে ওই সেতুটি। শনিবার সকালে গঙ্গায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেটি। এই ঘটনায় হতাহতের খবর যদিও মেসেনি। তবে নির্মীয়মান সেতুটি ভেঙে পড়ায় আবারও প্রশ্নের মুখে বিহারের নীতীশ কুমার এবং বিজেপি-র জোট সরকার। (Bihar Bridge Collapse)
বিহারের ভাগলপুর জেলায় সুলতানগঞ্জ-আগুয়ানি ঘাটের নির্মীয়মান সেতুটি শনিবার সকালে ভেঙে পড়েছে। এই নিয়ে তৃতীয় বার নির্মীয়মান ওই সেতুটি ভেঙে পড়ল। জানা গিয়েছে, গত ন'বছর ধরে সেতুটির নির্মাণকার্য চলছিল। এর আগেও, দু'বার সেতুটির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। তৃতীয় বারের জন্য শনিবার ফের ভেঙে পড়ল সেতুটি। সেতুটি যখন ভেঙে পড়ে, প্রত্য়ক্ষ্যদর্শীরা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় সেই দৃশ্য বন্দি করেন। সেই ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে। (Viral News)
নির্মীয়মান সেতুর যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, উঠছে প্রশ্ন। সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত মাল-মশলার গুণমান, এমনকি সেতুটির গঠন নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেতুটি নির্মাণের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা SK Singla Construction-এর তরফে বারংবার বেঙে পড়ে নির্মীয়মান সেতুটি নিয়ে কোনও সাফাই দেওয়া হয়নি। তাদের এই উদাসীনতা এবং সরকারের নির্বিকার আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভাগলপুরের সুলতানগঞ্জের সঙ্গে খাগারিয়ার আগুয়ানির মধ্য সংযোগ গড়ে তুলতে ওই সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ঘোষণা করেন নীতীশ। ওই সেতু নির্মাণের ফেল দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন সুগম হবে, তেমনই বিক্রমশীলা সেতুর উপর যানজট কমানো যাবে বলে দাবি ছিল নীতীশ সরকারের। কিন্তু বারংবার দুর্ঘটনায় সেতুটির গুণমান নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
এর আগে, ২০২২ সালের ৩০ জুন ভাগলপুরের দিকে সেতুটির একটি অংশ ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়ে সেতুর ৫ এবং ৬ নং স্তম্ভ। ২০২৩ সালের ৪ জুন সেতুটির আর একটি অংশ ভেঙে পড়ে। খাগারিয়ার দিকের ১০ এবং ১২ নম্বর স্তম্ভটি ভেঙে পড়ে সেবার। দ্বিতীয় বার সেতুর অংশ ভেঙে পড়া বিহার সরকারের তরফে নির্মাণকারী সংস্থাকে জরিমানাও করা হয়, যাতে ভেঙে পড়া অংশ নিজের খরচেই ওই সংস্থাকে তৈরি করতে হবে বলে জানানো হয়।
কিন্তুি শনিবার ফের সেতুর একটি অংশ ভেঙে পড়ল। সেতুটির গঠনে কিছু ত্রুটি থাকাতেই বারংবার এই বিপর্যয় ঘটছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। নামকরণ হয় 'মহাসেতু'। নির্মাণকার্য শুরু হয় ২০১৫ সালের ৯ মার্চ। সেতু নির্মাণের জন্য ১৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল বিহার সরকার। গত ন'বছর ধরে সেতুর নির্মাণ চলছে তো চলছেই। এমনকি বিহার সরকারের তরফে ভাগলপুর এবং খাগারিয়া থেকে সেতুমুখী ১৬ কিলোমিটার রাস্তাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি আজও।
সেতু নির্মাণকারী সংস্থা SK Singla Construction-কে বরাত দেওয়া নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কারণ হরিয়ানার ওই সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তাদের দফতরে তল্লাশিও চালায়। এর পরও বিহারে একাধিক প্রকল্পের তাদের বরাত দেওয়া নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। নীতীশের নীরবতা নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয়রাও।