নয়াদিল্লি: বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বলছিলেন। সেই সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার মধ্যেকার সমীকরণ তুলে ধরতে গিয়েছিলেন। সেই নিয়েই এই মুহূর্তে বিপাকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে বলে সাফাই দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষমাও চেয়েছেন নীতীশ। কিন্তু তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলতে শুরু করেছেন বিরোীরা। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাঁর নিন্দা করলেন। (Nitish Kumar)


মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-র হয়ে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়েছিলেন মোদি। সরাসরি নাম না নিলেও, সেখান থেকেই নীতীশকে কটাক্ষ করেন মোদি। তিনি বলেন, "ইন্ডি...জোটের একজন নামকরা নেতা নির্লজ্জের মতো বিধানসভায় অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছেন। ইন্ডি...জোটের একজন নেতাও তাঁর নিন্দা করছেন না। আর কত নীচে নামবে ওরা...ওদের জন্য আর কত লজ্জিত হতে হবে দেশকে?" (Narandra Modi slams Nitish Kumar)


এক সময় বিজেপি-র শরিক ছিল নীতীশের সংযুক্ত জনতা দল। পরে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে আসেন তিনি। একা মোদিই নন, বিজেপি-র একাধিক নেতাই এই মুহূর্তে নীতীশের নিন্দায় সরব। নীতীশের আচরণ অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং অমার্জিত বলে দাবি করছেন তাঁরা। বিহারে নীতীশের পদত্যাগের দাবিও তুলছে বিজেপি। দিল্লিতে বিহার ভবনের বাইরেও নীতীশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চোখে পড়েছে।



জাতিভিত্তিক জনগণনার সমীক্ষা রিপোর্ট তুলে ধরতে গিয়ে সম্প্রতি বিহার বিধানসভায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বলছিলেন নীতীশ। সেখানে মেয়েদের শিক্ষার উপর জোর দেন তিনি। নীতীশকে বলতে শোনা যায়, শারীরিক সম্পর্ক যাতে গর্ভাবস্থায় না পৌঁছয় তা একজন শিক্ষিত মেয়েই ঠিক করতে পারেন। এর পর নিরাপদ সঙ্গম নিয়েও কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে, তাতে স্থানীয় ভাষায় নীতীশ যা বলেন, তার মর্মার্থ দাঁড়ায়, ঔরস যাতে জরায়ুতে না পৌঁছয়, একজন শিক্ষিত নারীই স্বামীকে বোঝাতে পারেন।  তাঁর ভাষণের সেই অংশ সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়। 


আরও পড়ুন: Sisir Adhikari: শিশিরের 'সম্পত্তি বৃদ্ধি'র তদন্ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি কুণালের


জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, "দেশের মহিলাদের হয়ে নীতীশ কুমারের কাছে অবিলম্বে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানাচ্ছি। বিধানসভায় ওঁর রুচিহীন মন্তব্য মহিলাদের সম্ভ্রম এবং সম্মানের পক্ষে অবমাননাকর। এই ধরনের অবমাননাকর এবং সস্তা ভাষার প্রয়োগ আমাদের সমাজের উপর কালো দাগ। গণতন্ত্রে প্রকাশ্যে একজন নেতা যদি এই মন্তব্য করেন, তাঁদর অধীনে রাজ্যের কী অবস্থা হতে পারে অনুমেয়।"


যদিও তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নীতীশ। তিনি বলেন, "আমি আমার কথা ফেরত নিচ্ছি। আমি যে কথা বলেছি, তার ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। আমি তো মহিলাদের শিক্ষার প্রয়োজনের কথা বলেছি। তাতে যদি কেউ আহত হয়ে থাকেন, আমি ক্ষমা চাইছি।"


বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা, লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব যদিও নীতীশের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, "ওঁর মন্তব্যকে ভুল ভাবে দেখা উচিত নয়। অনেকে হয়ত অস্বস্তি বোধ করেন, কিন্তু স্কুলেই যৌনশিক্ষার পাঠ দেওয়া উচিত। এটা জীববিজ্ঞান। শিশুদের পাঠ্যক্রমে থাকা উচিত। উনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলছিলেন, এর ভুল ব্যাখ্যা হওয়া উচিত নয়।"


কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামছে না। আসাদউদ্দিন ওয়েইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন দলের তরফেও নীতীশের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এদিন বিহার বিধানসভায় ঢুকতেও বাধা পান নীতীশ। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি। নীতীশের বিরুদ্ধে মুজফ্ফরপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাও দায়ের হয়েছে ইতিমধ্যেই।