পাটনা: বিহারের (bihar) উপমুখ্যমন্ত্রী (deputy CM) হিসেবে শপথগ্রহণের পর দিনই কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে একহাত আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের (Tejashwi Jadav)। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকেই বললেন, 'ইডি, সিবিআই, আইটি সকলে এসে আমার বাড়িতেই অফিস খুলুক। কিন্তু তাতেও যদি ওরা শান্তি না পায় কী করব? আমাদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তদন্ত করতে চায় করুক। কোনও আপত্তি নেই।' এর পরেই সংযোজন, 'যে ১৮ মাস বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, আমার বিরুদ্ধে একটাও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। আরজেডি-র যে ১৮ জন মন্ত্রী, তাঁদেরও কারও বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই।'


বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ...
এর পরই পদ্মশিবিরের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেন লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে। বলেন, 'ইডি, সিবিআই, আইটি-র মাধ্যমে ভয়ের আবহ তৈরি করাই বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য। যদি কেউ ভয় পান, যদি কেউ ঘোড়া কেনাবেচায় রাজি থাকেন, তা হলে তাঁর দর নির্ধারণ করে তাঁকে কিনে ফেলো।' গত বুধবারই বিজেপিকে সরিয়ে বিহারের ক্ষমতার রাশ নিয়েছে চাচা-ভাতিজার সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার, উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তেজস্বী। তার পরই এদিন কেন্দ্র ও সেন্ট্রাল এজেন্সির বিরুদ্ধে সরব তিনি। 


‘মহাজোট’-এ নীতীশের প্রত্যাবর্তনে আসল লাভবান কে!


তেজস্বীর জন্যই কয়েক বছর আগে ‘মহাজোট’ ভেঙে বিজেপি-র হাত ধরেছিলেন নীতীশ। কিন্তু গোড়া থেকেই দুই দলের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না হলে খবর উঠে আসছিল। নীতীশকে নামমাত্র মুখ্যমন্ত্রী করে রেখে, সংখ্যার জোরে বিজেপি-ই সবকিছু পরিচালনা করছিল বলে অভিযোগ উঠে আসতে থাকে লাগাতার। সেই পরিস্থিতিতে ফের লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে শুরু করেন নীতীশ। শেষমেশ মঙ্গলবার বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে আসেন।


তার পরই সটান পটনায় লালু-জায়া রাবড়ি দেবীর বাড়িতে উপস্থিত হন নীতীশ। পুরনো তিক্ততা ভুলে তেজস্বীকে নতুন করে জোট সরকার গড়ার প্রস্তাব দেন তিনি। আরজেডি সূত্রে খবর, তেজস্বীর কাছে পুরনো ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র জন্য ক্ষমাও চান নীতীশ। তার পর দু’জনে বেরিয়ে পড়েন রাজভবনের উদ্দেশে। সেখানে সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। সেখান থেকে বেরিয়ে নীতীশকে পাশে নিয়ে তেজস্বীকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘পুরনো সবকিছু ভুলে যান। নতুন যাত্রার সূচনা করছি আমরা।’’ সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে বিজেপি শুধু বিভেদ তৈরি করতে জানে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


তবে এই গোটা পর্বে নীতীশ নন, আদতে তৈজস্বীই জয়ী হয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ গত বিধানসভা ভোটে নীতীশের দলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি বিহারে সরকার গড়লেও, একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে আরজেডি-ই। তাই নীতীশের প্রত্যাবর্তনে তেজস্বীরই জয় হয়েছে বলে দাবি আরজেডি-র নেতাদেরও। সংখ্যার হিসেবও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিহারের ৪৩ শতাংশ মানুষের প্রথম পছন্দ তেজস্বী। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন নীতীশ। তাই বিহারের রাজনীতিতে তেজস্বী আগামী দিনে নীতীশকে টপকে যাবেন বলে আশাবাদী অনেকে।


তবে ‘মহাজোট’-এ নীতীশের এই প্রত্যাবর্তন জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিহারে লালুর রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জেডিইউ এবং কংগ্রেস জোটের সাফল্যের নজির রয়েছে।  সম্মিলিত ভাবে লোকসভায় ৪০ জন সাংসদ পাঠায় তারা। একই সঙ্গে নীতীশের প্রত্যাবর্তনে হিন্দি বলয় থেকে এমন একজন অভিজ্ঞ নেতা পাওয়া গেল, বিরোধী ঐক্য সুনিশ্চিত করতে যিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। 


তেজস্বী বিহারের মানুষের প্রথম পছন্দ


নীতীশ নিজেও বিজেপি বিরোধী জোটের ঐক্য মজবুত করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। নিজের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনও বাসনা নেই বলে জানিয়ে দিলেও, এ দিন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি, সর্বোপরি নরেন্দ্র মোদির জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা নেই আমার। বরং প্রশ্ন ওঠা উচিত, ২০১৪-য় জিতলেও, ২০২৪-এ মোদি জিতবেন কিনা। ’’


আরও পড়ুন:৩৫ ফুটের রাখি, শিশুদের মিষ্টিমুখ, উৎসবে নজর কাড়ল আলিপুরদুয়ার