নয়াদিল্লি: গণধর্ষণ, খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েও 'ভাল আচরণে'র জন্য ছাড়া পেয়ে গিয়েছে সকলে। স্বাধীনতা দিবসে মিষ্টিমুখ করিয়ে জেলের বাইরের জগতে স্বাগত জানানো হয়েছে তাদের। সেই নিয়ে এ বার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হলেন গুজরাত দাঙ্গায় (Gujarat Riots 2002) পাশবিক অত্যাচারের শিকার বিলকিস বানো (Bilkis Bano Case)। দোষীদের মুক্তি দেওয়াার সিদ্ধান্তকে শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ জানালেন তিনি। রাত পোহালেই গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন (Gujarat Assembly Elections 2022)। তার আগে বিলকিসের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ম বলে মনে করা হচ্ছে।
ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ বিলকিস বানোর
চলতি বছরের ১৫ অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবস বিলকিস-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ১১ জন জেলের বাইরে বেরিয়ে আসে। গুজরাত সরকার তাদের সাজা মকুব করে দেয়। রাজ্য সরকারের আবেদন কেন্দ্রে মঞ্জুরও হয়ে যায় দুই সপ্তাহের মধ্যে। তার পর জেলের বাইরে মালা পরিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে বিলকিস-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্তদের স্বাগত জানাতে দেখা যায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যদের।
অপরাধীদের সাজা মকুবের ক্ষেত্রে দেশে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। ২০১৪ সালের সেই সাজা মকুব আইন অনুযায়ী, ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্তদের সাজা মকুব করা যায় না। কিন্তুি বিলকিসের অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৯৯২ সালের সাজা মকুব আইনের দ্বারস্থ হয় গুজরাত সরকার, যার আওতায় ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্তদের মুক্তি দেওয়ায় বিধি-নিষেধ ছিল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিজেপি-র রাজনৌতিক কৌশলেরই অঙ্গ। রাত পোহালেই নির্বাচন গুজরাতে, তার আগেই সুপ্রিম কোর্টে গেলেন বিলকিস। এ যাবৎ একমাত্র কংগ্রেসই বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার বিরোধিতা করে এসেছে গুজরাতে।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: ‘দিল্লিতে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে কেজরিওয়াল, বাংলায় মমতা', বললেন দিলীপ
২০০২ সালের গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের পর গুজরাত জুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস। কোলের সন্তান এবং পরিবারের মোট ১৫ সদস্যের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ৩ মার্চ ধূ ধূ জমি ঘিরে গজিয়ে ওঠা ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০-৩০ জনের দল তাঁদের উপর চড়াও হয়। গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস। বিলকিসের চোখের সামনে পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান ছ’জন।
তার পরেও দীর্ঘ দিন এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমাজকর্মীদের তৎপরতায় বিষয়টি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলে, ২০০৪ সালে ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। আমদাবাদে শুরু হয় শুনানি। কিন্তু সেখানে তদন্ত হলে, প্রমাণ লোপাট করা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিলকিস। তাতে আমদাবাদ থেকে মুম্বইয়ে মামলাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পর সিবিআই আদালত ওই ১১ জনকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনায়। গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণের ষড়যন্ত্র, খুন এবং বেআইনি জমায়েত ধারায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় অন্য সাত জনকে। শুনানি চলাকালীনই মৃত্যু হয় এক জনের।
রাত পোহালেই নির্বাচন গুজরাতে, তার আগে আদালতে বিলকিস
এর পর, ২০১৮ সালে বম্বে হাইকোর্ট সেই সাজা বহাল রাখে। অন্য সাত জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তও খারিজ করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষতিপূরণবাবদ বিলকিসকে ৫০ লক্ষ টাকা, চাকরি এবং বাড়ি দিতে হবে বলে গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হয়েও প্রত্যেকে প্যারোলে অন্তত ১ হাজার দিন করে জেলের বাইরে থেকেছে। তার পর তাদের মধ্যে একজন সুপ্রিম কোর্টে সাজা মকুবের আবেদন জানায়। গুজরাত সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে বলে শীর্ষ আদালত। সেই মতো একটি কমিটি গঠন করে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তাতেই ওই ১১ জনের সাজা মকুবের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু অপরাধীদের সাজা মকুবের সিদ্ধান্ত মহারাষ্ট্র সরকারের হওয়া উচিত, গুজরাতের নয় বলেও শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া আবেদনে জানিয়েছেন বিলকিস।