নয়াদিল্লি: সময়ের আগে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরলেও, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের জেলে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পর ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও, এখনও জেলমুখো হতে দেখা যায়নি ১১ জনের মধ্যে কাউকেই। বরং এখনই জেলে ফিরতে অসুবিধে বলে জানিয়ে, একাধিক অজুহাত তুলে ধরল তারা। পরিবারের সদস্যের অসুস্থতার কথা জানাল কেউ, কেউ আবার পারিবারিক অনুষ্ঠানের দোহাই দিল। (Bilkis Bano Case)


‘ভাল আচরণে’র জন্য গত বছর স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসের ধর্ষকদের সময়ের আগেই মুক্তি দেয় গুজরাত সরকার। গলায় মালা পরিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে তাদের স্বাগত জানায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সেই নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হলে, এ বছর ৮ জানুয়ারি গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে বিলকিসের ধর্ষকদের জেলে ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হয়। (Bilkis Bano Convicts)


দু’সপ্তাহ এখনও পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি যদিও। তবে এখনও পর্যন্ত বিলকিসের ধর্ষকদের একজনও থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে বলে খবর নেই। বরং অধিকাংশের বাড়িতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তালা ঝুলছে। পরিবারের কেউ তাদের হালহাকিকত জানাতে পারেননি। সেই আবহেই ১১ জনের মধ্যে সাত জন শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বৃহস্পতিবার। আত্মসমর্পণের জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে তারা।


আরও পড়ুন: Tamil Nadu Temperature Drop: ‘বায়ু শনশন, শীতে কনকন’, আচমকা কাশ্মীর হয়ে গেল তামিলনাড়ু? প্রকৃতির খেয়াল নাকি অন্য কারণ


ওই সাত জনের মধ্যে, গোবিন্দভাই নাই নামের একজন জানিয়েছে, কিছু সাংসারিক দায়িত্ব এসে পড়েছে তার কাঁধে। বাবার বয়স ৮৮ বছর, মায়ের ৭৫। দু’জনই তার উপর নির্ভরশীল। প্রদীপ রমনলাল মোধিয়া আবার জানিয়েছে, সম্প্রতি হৃদযন্ত্রে অস্ত্রপচার হয়েছে তার। সেরে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।


জসবন্ত চতুর্ভাই নাই নামের আর এক জন  আবার বাড়তি ছয় সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। তার যুক্তি, শীতকালীন ফসলের চাষ করা হয়েছে জমিতে। পাকা ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত জেলে ফেরার উপায় নেই তার। রমেশ রূপাভাই জানিয়েছে, সামনেই ছেলের বিয়ে, যার ব্যবস্থাপনায় আপাতত ব্যস্ত রয়েছে সে। মিতেশ চমনলাল ভট্টের দাবি, কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা জানিয়েছে। রাধেশ্যাম ভগবানদাস শাহও আদালতে বাড়তি সময় চেয়ে আবেদন জানিয়েছে।


বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি সঞ্জয় করোলের বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছে বিলকিসের ধর্ষকরা। শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রির মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে আবেদনগুলি পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্যও আবেদন জানাতে পারে বিলকিসের ধর্ষকরা। মহারাষ্ট্রে যেহেতু মামলার শুনানি হয়েছে, মহারাষ্ট্র সরকারের কাছেও সাজা মকুবের আবেদন জানাতে পারে।


২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস। মাঠ দিয়ে পালানোর সময় গণধর্ষের শিকার হন তিনি। এর পর তাঁর চোখের সামনেই পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। খুন করা হয় তাঁর তিন বছরের কন্যাকেও।