কলকাতা: মতভেদের খবর উঠে আসছিল বেশি কিছুদিন ধরেই। সেই আবহেই বুধবার শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় তাঁর দল তৃণমূল একাই লড়বে বলে জানিয়েছেন। I.N.D.I.A জোটের শরিক হলেও, লাগাতার তাঁকে অসম্মান করেছে কংগ্রেস, বার বার তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, আসন সমঝোতা নিয়েও ঝামেলা কার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জানান, বাংলার ব্যাপারে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাঁর। মমতার এই ঘোষণা রাজ্য রাজনীতি তো বটেই, জাতীয় রাজনীতিতেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে। (I.N.D.I.A Alliance)



প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে  বিরোধের জেরেই এদিন বাংলায় একা লড়ার ঘোষণা করেন মমতা। সরাসরি কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। এর পরই জাতীয় রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। কংগ্রেসের তরফে তড়িঘড়ি বিবৃতি দিতে এগিয়ে আসেন দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, "রাহুল গাঁধী আগেই বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল I.N.D.I.A জোটের অন্যত্মন শক্তিশালী স্তম্ভ। মমতাজি অনেক বড় নেত্রী, অনেক সম্মানীয় রাজনীতি। ওঁর থেকে প্রেরণা পাই আমরা। আমি জানি, সনিয়া গাঁধীজি, মল্লিকার্জুন খড়্গেজি,- রাহুলজি ওঁকে খুব ভালবাসেন, সম্মান করেন। মমতাজিকে ছাড়া I.N.D.I.A জোটের কল্পনাই করা যায় না।  কখনও কখনও মতবিরোধ হয়। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বেরোবে। মমতাজি জানিয়েছেন, 'বিজেপি-কে হারানোই আমার লক্ষ্য, বিজেপি-কে হারিয়েই ছাড়বেন'। সেই ভাবনা নিয়েই কাল কোচবিহারে ঢুকছি আমরা।" 



তবে জয়রাম মমতার পক্ষে কথা বললেও, কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাসমুন্সির গলায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সুরই শোনা যায়। তিনি বলেন, "ঘুরপথে বিজেপি-কে সাহায্য় করছেন উনি। আমরা জানি, বিজেপি-র সঙ্গে আলাদা বোঝাপড়া রয়েছে ওঁর। এই সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন। এত দিন ধরে I.N.D.I.A জোটে রয়েছেন, এখন হঠাৎ মত পরিবর্তন করলেন। এতেই বোঝা যায়, বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন উনি। বাংলায় বিজেপি-কে সাহায্য করবেন।"



 আরও পড়ুন: I.N.D.I.A Alliance: ‘মমতাকে ছাড়া জোট ভাবাই যায় না’, টানাপোড়েনের মধ্যেই ঘোষণা কংগ্রেসের


এ নিয়ে I.N.D.I.A জোটের শরিক, আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। তাঁর কথায়, "বাংলায় তৃণমূল বড় দল। কংগ্রেস এবং সিপিএম বরাবর তাদের বিরোধিতা করে আসছে। তাই আসন সমঝোতায় সমস্যা হওয়ারই কথা। তবে এই বিরোধ মিটে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গাঁধী I.N.D.I.A জোটের সাফল্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করি, জোটের সব শরিক মিলে একসঙ্গে লড়াই করব।" পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেন, "হতে পারে ওঁর সঙ্গে এমন আলোচনা হচ্ছে। পঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েই লড়বে AAP."



NCP সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেন, "উনি আমাদের দিদি। আমরা ওঁকে ভালবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। I.N.D.I.A জোটের সকলে ঐক্যবদ্ধ। একসঙ্গে লড়াই করব আমরা। জোটের কোনও ক্ষতি হবে না। দিদি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। প্রত্যেক রাজ্যে আলাদা মডেল নিয়ে এগোব আমরা। জোটের অন্দরে কোনও লড়াই নেই। প্রায়শই আমাদের মধ্যে কথা হয়।"



বাংলার রাজনীতিতেও এই মুহূর্তে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস এবং CPM-এর অভিযোগ, ইডি এবং সিবিআই তল্লাশিতে জেরবার হয়েই এমন কথা বলছেন মমতা। তিনি যে জোটে থাকবেন না আগেই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁরা। দিল্লির দাদাদের খুশি করতে জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের সেই দাবিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন বিজেপি নেতা আর অশোক। তাঁর বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কংগ্রেস একটা অযোগ্য দল। ওদের নেতাই নেই। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী দিনে নীতীশ কুমার, অখিলেশ যাদবও সরে যাবেন। শুধু বিরিয়ানি খেলেন। মমতা এখন কংগ্রেসকে বাংলা থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন।"


BJP সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, "এটা হওয়ারই ছিল। যেখানে স্বার্থপর, সুবিধাবাদী লোকজন মিলে জোট করেছেন, সেখানে এমনটাই হওয়া কাম্য। এদের না কাছে কোনও নেতা, না আছে নীতি। তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদিকেই প্রধানমন্ত্রী চয়ন করবেন।"


Delhi: On Mamata Banerjee's statement, BJP MP Ravi Shankar Prasad says, "This had to happen...When there is a selfish, opportunistic alliance (INDIA)...then such things happen."



২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার পরই বিরোধী জোটের সলতে পাকাতে শুরু করেন মমতা। সেই প্রস্তাব নিয়ে নিজে দিল্লি ছুটে যান সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে। বিরোধী শিবিরের বাকি নেতাদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করেন। সময় থাকতে প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার আর্জি জানান মমতা। তার পরও জোটের সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায় বিরোধীদের তরফে। সেখানেও আসন সমঝোতা নিয়ে বাধা আসে। রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'র কথাও তাঁকে জানানো হয়নি বলে দাবি করেন মমতা। একদিন আগে, রাহুল যদিও মমতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কথাই তুলে ধরেছিলেন।