নয়াদিল্লি: সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি থেকে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে মতভেদ, একের পর এক ধাক্কার পর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে একা লড়াইয়ের ঘোষণা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সরাসরি কংগ্রেসের (Congress) দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। রাহুল গাঁধীর 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি বলে যেমন জানিয়েছেন, তেমনই জানিয়েছেন, আসনের দাবি নিয়েও গোঁ ধরে রয়েছে কংগ্রেস। সেই আবহেই এবার মুখ খুললেন জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। মমতাকে নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানালেন। (I.N.D.I.A Alliance)


বুধবারই I.N.D.I.A জোটের অন্যতম রূপকার মমতা, বাংলায় জোটের বাইরে, পৃথক লড়াইয়ের ঘোষণা করেছেন। জানিয়েছেন, আঞ্চলিক দলগুলিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলে এসেছেন গোড়া থেকে। সেখানে কেউ হস্তক্ষেপ করতে গেলে নিজেদের মতো করেই বুঝে নেবেন। মমতার এই ঘোষণায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। সেই নিয়েই এবার মুখ খুললেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা তথা মুখপাত্র জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh)। তিনি জানিয়েছেন, মমতাকে ছাড়া জোটের কল্পনাই করা সম্ভব নয়। (Lok Sabha Elections 2024)


বুধবার মমতার ঘোষণার পর সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন জয়রাম। তিনি বলেন, "রাহুল গাঁধী আগেই বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল I.N.D.I.A জোটের অন্যত্মন শক্তিশালী স্তম্ভ। মমতাজি অনেক বড় নেত্রী, অনেক সম্মানীয় রাজনীতি। ওঁর থেকে প্রেরণা পাই আমরা। আমি জানি, সনিয়া গাঁধীজি, মল্লিকার্জুন খড়্গেজি,- রাহুলজি ওঁকে খুব ভালবাসেন, সম্মান করেন। মমতাজিকে ছাড়া I.N.D.I.A জোটের কল্পনাই করা যায় না।  কখনও কখনও মতবিরোধ হয়। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বেরোবে। মমতাজি জানিয়েছেন, 'বিজেপি-কে হারানোই আমার লক্ষ্য, বিজেপি-কে হারিয়েই ছাডডবেন'। সেই ভাবনা নিয়েই কাল কোচবিহারে ঢুকছি আমরা।" এই মুহূর্তে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'য় শামিল রয়েছেন জয়রাম। অসমে অবস্থান করছেন তাঁরা। সেখান থেকেই মমতাকে নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান জানিয়ে দিলেন জয়রাম।



আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: বাধ্য হয়েই সরে এলেন? লোকসভায় ‘একলা চলো’ নীতি মমতার


রাহুলের 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' বাংলা ছুঁয়ে যাবে পথে। কিন্তু জোটের শরিক হওয়া সত্ত্বেও, তাঁকে সেকথা জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। সেই প্রসঙ্গে এদিন জয়রাম জানান, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সব জোটসঙ্গীকেই শামিল হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। রাহুলও একদিন আগেই জানান, মমতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। যদিও মমতার দাবি, রাহুলের পদযাত্রা নিয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। 


আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়েও কংগ্রেসের সঙ্গে ঝামেলা বেধেছে তৃণমূলের। রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১০ থেকে ১২টি আসন দাবি করেছে বলে খবর। কিন্তু তৃণমূল তাদের দু'টি আসনই ছাড়তে রাজি। তৃণমূলের যুক্তি, গত দুই নির্বাচনে কংগ্রেসের ফল অত্যন্ত খারাপ হয়েছে। বিধানসভায় শূন্যে নেমে গিয়েছে তারা। তাদের এতগুলি আসন না ছেড়ে, রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, সেই তৃণমূলকেই আসন সমঝোতায় প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কংগ্রেস অন্যায্য দাবি করছে বলে দাবি জোড়াফুল শিবিরের। 


এর পরই, বুধবার বাংলায় একা লড়ার কথা জানান মমতা। বাংলার ব্যাপারে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করেন। সেই নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। সেই আবহে মুখ খুলেছেন I.N.D.I.A জোটের শরিক আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। তাঁর কথায়, "বাংলায় তৃণমূল বড় দল। কংগ্রেস এবং সিপিএম বরাবর তাদের বিরোধিতা করে আসছে। তাই আসন সমঝোতায় সমস্যা হওয়ারই কথা। তবে এই বিরোধ মিটে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গাঁধী I.N.D.I.A জোটের সাফল্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করি, জোটের সব শরিক মিলে একসঙ্গে লড়াই করব।" পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেন, "হতে পারে ওঁর সঙ্গে এমন আলোচনা হচ্ছে। পঞ্জাবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েই লড়বে AAP."


বাংলার রাজনীতিতেও এই মুহূর্তে তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস এবং CPM-এর অভিযোগ, ইডি এবং সিবিআই তল্লাশিতে জেরবার হয়েই এমন কথা বলছেন মমতা। তিনি যে জোটে থাকবেন না আগেই বুঝতে পেরেছিলেন তাঁরা। দিল্লির দাদাদের খুশি করতে জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের সেই দাবিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন বিজেপি নেতা আর অশোক। তাঁর বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কংগ্রেস একটা অযোগ্য দল। ওদের নেতাই নেই। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আগামী দিনে নীতীশ কুমার, অখিলেশ যাদবও সরে যাবেন। শুধু বিরিয়ানি খেলেন। মমতা এখন কংগ্রেসকে বাংলা থেকে বেরিয়ে যেতে বলছেন।"