আমদাবাদ: শুধু জয়ী বললে লঘু করে দেখানো হয়। গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে যাবতী প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে বিজেপি। মহাসমারোহে তার উদযাপন সম্পন্ন হয়েছে আগেই। কিন্তু দু’মাস পেরোতে না পেরোতে সেখানে আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলল বিজেপি (BJP)। দেশের প্রথম দুগ্ধ সমবায়, আমুল ডেয়ারির নিয়ন্ত্রণ কার্যত ছিনিয়ে নিল তারা, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বিগত ৭৭ বছর দরে যা বিজেপি-র নাগালে এসেনি একবারের জন্যও (Amul Dairy)।
গুজরাতে মোট ১৮টি দুগ্ধ সমবায় রয়েছে। তার মধ্যে ১৭টির নিয়ন্ত্রণ বিজেপি-র হাতে উঠলেও, এতদিন আমুল গেরুয়া শিবিরের হাতের বাইরে ছিল। কিন্তু গত ডিসেম্বরে বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের পরই সেই অধরা স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলল বিজেপি, তা-ও আবার কংগ্রেস (Congress) ভাঙিয়েই, যাতের গত নির্বাচনে পর্যুদস্ত হতে হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একে একে পাঁচ কংগ্রেস নেতা বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। শেষ মেশ মঙ্গলবার আমুলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বিজেপি-র হাতে উঠেছে। কায়রা দুগ্ধ উৎপাদন জেলা সমবায়, অর্থাৎ আমুল ডেয়ারির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিপুল পটেল (BJP takes Over Amul)। ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেস থেকে বিজেপি-তে এসে ওঠা কান্তি পারমার সোঢা।
এর আগে, ২০০২ সালে থেকে একটানা আমুল দুগ্ধ সমবায়ের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক রামসিংহ পারমার। রাজ্যসভা নির্বাচনের আগে, ২০১৭ সালে তিনিও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন। তার পরেও আনন্দ এবং খেড়া, এই দুই জেলা কংগ্রেসের গড় হিসেবই টিকেছিল। বোরসাডের প্রাক্তন বিধায়ক রাজেন্দ্রসিংহ পারমার সমবায়ের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। গতবছরই তাঁর নিযুক্তিতে ছাড়পত্র দেয় গুজরাত হাইকোর্ট।
কিন্তু গত সপ্তাহেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে বিজেপি-র কাছে আমুল ডেয়ারির চার ডিরেক্টরকে হারাতে হয় কংগ্রেসকে। তাতেই আমুলের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয় তাদের। আমুলে কংগ্রেসের চার ডিরেক্টরই বিজেপি-তে যোগ দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি গান্ধীনগরে তাঁদের দলে যোগদান করান গুজরাত বিজেপি-র সভাপতি সিআর পাটিল। জোভানসিংহ চৌহান, সীতাচাঁদু পারমার, সারদা হরি পটেল, ঘেলা মানসিংহ জালা বিজেপি-তে যোগ দেন। ২০২০-র সেপ্টেম্বরে আমুল ডেয়ারি সমবায়ে ১১টি আসনের মধ্যে যে আটটি জিতেছিল কংগ্রেস, তা দুইয়ে এসে ঠেকে। আনন্দের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক কান্তি সোঢা পারমারও বিজেপি-তে যোগ দেন বছরের শুরুতেই।
তার পরই আনন্দ জেলা সার্কিট হাউসে বৈঠক ডেকে বিপুল এবং সোঢাকে চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এই দু’জনের নিযুক্তিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পটেল সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী নেতা বিপুল। আমুলের প্রতিষ্ঠাতা ত্রিভুবনদাস পটেলের পর পটেল সম্প্রদায় থেকে এই প্রথম তাঁর হাত ধরে আমুলের দায়িত্বে এলেন কেউ। অন্য দিকে, সোঢা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধি। আর OBC সম্প্রদায়ের বহু মানুষই দুগ্ধ উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এই দু’জনের নিযুক্তিতে বিজেপি-র জন্য ভারসাম্যও বজায় রইল।
১৯৭০ সালে আমুলের চেয়ারম্যান পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ করেন ত্রিভুবনদাস। তার পর থেকে কংগ্রেস নেতাদের হাতেই আমুলের নিয়ন্ত্রণ থেকেছে। রামসিংহ পদে বসেন ২০০০ সালের গোড়ায়। এমনকি কংগ্রেস ভাঙিয়ে বিজেপি দলবারী করে ফেলার পরও তাঁর নাম উঠে আসছিল। কিন্তু শেষমেশ তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এইমুহূর্তে আমুল ডেয়ারিতে মাত্র দুই আসন রয়ে গিয়েছে বিজেপি-র। একটিতে রয়েছে রাজেন্দ্রসিংহ পারমারের দখলে, অন্যটি সঞ্জয় পটেলের। কিন্তু ডিসেম্বরের নির্বাচনে এতকাল কংগ্রেসের দখলে থাকা বোরসাডে পরাজিত হয়েছেন তিনি। ওই আসন গুজরাতের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী মাধবসিংহ সোলাঙ্কির গড় হিসেবেও পরিচিত ছিল একসময়।
ফলে আমুল ডেয়ারিতেই নয়, আনন্দ এবং খেড়া জেলায় এই মুহূর্তে কংগ্রেসের অবস্থা নড়বড়ে, অথচ এই দুই জেলাই একসময় তাদের গড় ছিল। ওই দুই জেলার গ্রামীন সমবায়ে দুগ্ধ উৎপাদনকারীর সংখ্যা ৭ লক্ষ। সাম্প্রতিক কালে গুজরাতে কমপক্ষে ১৫টি দুগ্ধ সমবায় ইউনিয়ন হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার কোনও সম্ভাবনাই দেখছেন না গুজরাত প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্ব। ২০১৭ সালে রামসিংহ বিজেপি-তে যাওয়ার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতে শুরু করে বলে মত তাঁদের একাংশের।