কলকাতা: কলকাতায় আরও এক মিউকরমাইকোসিস-আক্রান্তের হদিশ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, করোনা-মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। তাঁকে বাইপাসের ধারে আরএন টেগোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিত্সকরা জানান, ওই ব্যক্তি মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছেলের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। এরপর করোনাভাইরাস আক্রান্ত হন। করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ৬০ ছুঁইছুঁই ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। তাঁকে শীঘ্রই ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তিন সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন তিনি।
বাংলাতেও ছড়াচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ।স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে দাবি, এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে হরিদেবপুরের বাসিন্দা ৩২ বছরের শম্মা চক্রবর্তীর।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সব মিলিয়ে ৭ জন আক্রান্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হয়েছে এমন সন্দেহভাজনের সংখ্যা ৮। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে ২ জনের মৃত্যুর তদন্ত করছে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গগুলি কী কী? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের গাইডলাইনে বলা হয়েছে,চোখ ও নাক ব্যথা, লাল হয়ে যাওয়া। জ্বর,কাশি,মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, রক্তবমি, মানসিক অস্থিরতা, এই উপসর্গগুলি থাকলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার জোরাল সম্ভাবনা রয়েছে।স্বাস্থ্য দফতরের গাইডলাইনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যে সকল করোনা আক্রান্ত রোগী অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল,সাইনাস,নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া,নাক দিয়ে কালচে জল অথবা রক্ত বেরনো, থুতনিতে অথবা মুখের যেকোনও একপাশে ব্যথা, দাঁতে ব্যথা, দাঁত পড়ে যাওয়া ,চোয়ালে ব্যথা হতে পারে।এছাড়াও চোখে ব্যথা, এক জিনিসকে দুটো দেখা, এছাড়াও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে বুকে ব্যথাও হতে পারে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে দূরে থাকতে কী কী করবেন? সেই সতর্কতা নিয়ে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে মাস্কের সঠিক ব্যবহার, ধুলোবালিময় এলাকা বা নির্মাণস্থলে গেলে বাড়তি সতর্কতা,বাগান বা মাটি নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে জুতো, লম্বা ট্রাউজার, ফুল স্লিভ শার্ট এবং গ্লাভস পরার মতো বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। করোনাজয়ী ও ডায়াবেটিকদের ব্লাডে গ্লুকোজের মাত্রায় নজর রাখা,এবং স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে সরকারি গাইডলাইনে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন,ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয় amphotericin b ইনজেকশন। কিন্তু করোনা আবহে, এই ইনজেকশনেরও কালোবাজারি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। তিনি লিখেছেন, মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার জন্য Liposomal Amphotericin-B অত্যন্ত জরুরি। তবে বাজারে এর তীব্র ঘাটতির খবর মিলছে। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) আমার অনুরোধ, দয়া করে এই বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন।কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দেশে Amphotericin-B এর জোগান সীমিত ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এর উত্পাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।