নয়াদিল্লি: সম্প্রসারণ আগাগোড়া চাপসৃষ্টি করা হচ্ছিল চিনের তরফে। শেষ পর্যন্ত তাদের দাবিই মান্যতা পেল ব্রিকস গোষ্ঠীতে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত ব্রিকস গোষ্ঠী এবার আরও সম্প্রসারিত হল (BRICS Group)। পূর্ণ সদস্য হিসেবে এবার আরও ছয় দেশকে আহ্বান জানানো হল। বৃহস্পতিবার এই সম্প্রসারণের কথা জানালেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। (BRICS New Members)


যে ছয়টি নতুন দেশকে ব্রিকস গোষ্ঠীতে যোগদানে আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা হল, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরব। আগামী বছর থেকে ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান করতে দেখা যেবে এই ছয় দেশকে। তাদের পূর্ণ সদস্যতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী বছর ১ জানুয়ারি থেকে সদস্যতা কার্যকর হবে বলে জামান রামাফোসা। 


আফ্রিকা এবং এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলিকে একজোট করতে ব্রিকগোষ্ঠী গঠন করা হয়। গোড়ায় ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত এবং চিনই শামিল ছিল তাতে। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ দেওয়ার পর নাম ব্রিক থেকে ব্রিকস হয়। এবার আরও ছয় দেশ ওই গোষ্ঠীর স্থায়ী সদস্য হতে চলেছে, দিল্লির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল, যার ব্যাখ্যাও মিলেছে। 


আরও পড়ুন: Chandrayaan 4: সবে চাঁদের মাটি ছুঁয়েছে চন্দ্রযান-৩, আবারও কাজে নেমে পড়ল ISRO, ’২৬-এ চন্দ্রযান-৪


বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্রিকস গোষ্ঠীর সম্প্রসারণ ঘটানোর জন্য জোর দিয়ে আসছিল চিন। জি-২০ এবং জি-৭ গোষ্ঠীর উপর যেমন অলিখিত ভাবে হলেও আমেরিকার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, তেমনই ব্রিকস গোষ্ঠীর উপর নিজেদের আধিপত্য কায়েমের লক্ষ্য়েই ব্রিকসের সম্প্রসারণ চেয়ে চিন লাগাতার চাপ দিচ্ছিল বলে মত আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের। 


এত দিন কোনও রকমে বিষয়টি ঠেকিয়ে রেখেছিল ভারত। চিনা আধিপত্য রুখতেই সম্প্রসারণের বিরোধিতা করে আসছিল দিল্লি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হতে থাকে, বেজিং এবং ক্রেমলিনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে উঠতে শুরু করে। পশ্চিমি আগ্রাসনের প্রশ্নকে সামনে রেখে, বৃহত্তর সমন্বয় গড়ে তোলার পক্ষপাতী তারা। ভারতের জন্য টানাপোড়েনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ একদিকে, আমেরিকার সঙ্গেও সুসম্পর্ক তাদের, আবার রাশিয়ার সঙ্গেও। শেষ মেশ ব্রিকস সম্প্রসারণে ভারতকেও নিমরাজি হতে হয়েছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ রামাফোসা জানিয়েছেন, সর্বসম্মতিতেই সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার পর ট্যুইটও (অধুনা X) করেন বিষয়টি নিয়ে। লেখেন, 'নয়া ছয় সদস্য দেশকে ব্রিকসে স্বাগত  জানাই। এই ছয়ে দেশের রাষ্ট্রনেতা এবং নাগরিকদের অভিনন্দন। প্রত্যেক দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক মজবুত, ইতিহাস তার সাক্ষী। পরস্পরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, একজোট হয়ে কাজ করলে, সমৃদ্ধি এবং সহযোগিতাপূর্ণ নয়া যুগের সূচনা হবে'। যদিও সম্প্রসারণে রাজি হওয়া ছাড়া ভারতের উপায় ছিল না বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।