নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করে ইতিহাস রচনা করেছে ভারত। তবে সেই সাফল্যে মশগুল হয়ে না থেকে, পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. তবে চন্দ্রযান-৪ যৌথ অভিযান হতে চলেছে। চন্দ্রাভিযানে হাত মেলাতে চলেছে ভারত এবং জাপান। চাঁদের মাটিতে জলের খোঁজ চালানোর উদ্দেশ্য নিয়েই রওনা দেবে চন্দ্রযান-৪। (Chandrayaan 4)
চন্দ্রযান-৪ অভিযানের জন্য জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাপান এ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA)-র সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে ISRO. যৌথ উদ্যোগে Lunar Polar Exploration Mission (Lupex) মহাকাশযানটিকে চাঁদে পাঠানো হবে, Lupex-এরই অন্য নাম চন্দ্রযান-৪। চাঁদের মাটিতে জল আছে কি, শুধুমাত্র এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই রওনা দেবে সেটি। (Mission Lupex)
বিগত কয়েক বছরে মহাকাশে নজরদারি চালাতে গিয়ে একাধিক বার চাঁদের বুকে জলের অস্তিত্বের ইঙ্গিত মিলেছে। ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের কথা মাথায় রেখেই এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি। কারণ জলের খোঁজ পাওয়ার অর্থ, তাকে কাজে লাগিয়ে চাঁদের বুকে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে তোলা সম্ভব। চন্দ্রযান-৪ সেই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রওনা দেবে।
এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, সেই অনুযায়ী, চাঁদের মেরু অঞ্চলে জলের খোঁজ চালাবে চন্দ্রযান-৪। সেই জলের সন্ধান পাওয়া গেলে, সেই জলের গুণমান কেমন, কত পরিমাণ জল রয়েছে এবং তাকে কোন কাজে লাগানো যেতে পারে, সেই নিয়ে চলবে গবেষণা এবং সেই মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বিজ্ঞানীরা।
নজরদারিতে এখনও পর্যন্ত যে তথ্য হাতে উঠে এসেছে, সেই অনুযায়ী, চাঁদের বুকে ৬০ হাজার কোটি কিলোগ্রাম বরফ রয়েছে, যা দিয়ে বৃহদাকার ২ লক্ষ ৪০ হাজার সুইমিং পুল ভর্তি করা সম্ভব। এই অনুমান একেবারে সঠিক কিনা, তাতে সিলমোহর দেওয়ার পাশাপাশি, পৃথিবী থেকে কোনও উপায়ে চাঁদে জল সরবরাহ করা যায় কিনা, করা গেলেও, ভবিষ্যতের অভিযানের জন্য কত পরিমাণ জল বয়ে নিয়ে যেতে হবে, চাঁদের মাটি থেকেই বা কত জল তোলা যাবে, সেই সংক্রান্ত তথ্য সংগ্র এবং হিসেব-নিকেশের কাজ করবে চন্দ্রযান-৪।
চাঁদের মাটিতে জল পাওয়া গেলেই হল না, সেই জল আদৌ ব্যবহারের উপযোগী কিনা, কোথা থেকে তার উৎপত্তি, এসবও খতিয়ে দেখবে চন্দ্রযান-৪। জল সংরক্ষণ, প্রাণধারণে তার ব্যবহার, ওই জলের চালিকাশক্তিও পরখ করে দেখা হবে। এর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে চন্দ্রযান-৪ তৈরিতে।
এখনও পর্যন্ত যে খবর মিলেছে, চন্দ্রযান-০৪ মহাকাশযানে থিন-ফিল্ম সোলার সেলস ব্যবহার করা হবে, যার মাধ্যমে আলোকশক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব। আলট্রা-হাই-এনার্ডি-ডেনসিটি ব্যাটারি থাকবে বসানো, যাতে রাতের বেলা বা অন্ধকার জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগে কোনও বিঘ্ন না ঘটে। চাঁদের মাটিতে টিকে থাকার উপযোগী করে তোলা হবে চন্দ্রযান-৪ মহাকাশযানকে।
চাঁদের বুকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অত্যন্ত কম। তাই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্রগর্ভ পর্যন্ত অন্বেষণ করে দেখবে চন্দ্রযান-৪। এর পাশাপাশি, চাঁদের গতিশীলতা অনুধাবন করবে, রাতের বেলাও কোন উপায়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া যায়, চন্দ্রপৃষ্ঠে খননকার্য চালানো যায় কোন উপায়ে, , তারও সমাধানসূত্র বের করার লক্ষ্য রয়েছে। শুধু চাঁদই নয়, চন্দ্রযান-৪ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে মঙ্গল অভিযান আরও সহজ হবে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৬ সালে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিতে পারে চন্দ্রযান-৪।