কলকাতা: কারও সর্বনাশ কারও পৌষমাস। করোনা অতিমারীতে গোটা বিশ্বে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠলেও ঘুড়ির দোকানিদের মুখে হাসি দারুণ চওড়া। করোনার জন্য বেশিরভাগ মানুষের যাতায়াত এখন নিয়ন্ত্রিত, নিতান্ত দরকার ছাড়া কেউ ঘর থেকে বার হচ্ছেন না। সময় কাটাতে খোঁজ পড়েছে চিরাচরিত ঘুড়ি লাটাইয়ের। আকাশে আকাশে আবার চলছে বলমার, ময়ূরপঙ্খীদের লড়াই। সামনে বিশ্বকর্মা পুজো। ঘুড়ির জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছেন দোকানিরা।
হাতিবাগানের সন্টু কাইট শপের শুভজিৎ গড়াই জানাচ্ছেন, গত ১৫ বছরে এমন বিক্রি তাঁরা আর দেখেননি। তাঁদের ঘুড়ি আসে উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে, মাঞ্জা বেরিলি থেকে। এ বছর দেশ জুড়ে ঘুড়ির চাহিদা এত বেড়ে গিয়েছে, যে উত্তর প্রদেশের বিক্রেতারাও সামাল দিতে পারছেন না। তবে ভিন রাজ্য থেকে যে সব ঘুড়ি আসে সেগুলো মূলত প্রতিযোগিতার জন্য। বড় বড় ঘুড়ি,এক একটার দাম ১৫ থেকে ১৮ টাকা। করোনায় এ বছর এ রাজ্যে ঘুড়ি প্রতিযোগিতা প্রায় হয়নি, শেষ হয়েছিল সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতে, কলেজ স্ট্রিটের কাছে কলাবাগানে। কিন্তু প্রতিযোগিতা না হলেও এ বছর ঘুড়ি উড়ছে দুর্দান্ত, বৃষ্টি না থাকায় আকাশও একদম পরিষ্কার।
শুভজিৎ বলেছেন, এ রাজ্যে ঘুড়ির মূল চাহিদা বিশ্বকর্মা পুজোর সময়। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আগের মত এখন আর ঘুড়ির বিক্রি নেই, তবু বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পাঁচেক আগে থেকে অন্যান্যবার তাঁদের দিনে ৫০ থেকে ৬০,০০০ টাকার ঘুড়ি বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর চাহিদা এত যে তাঁরা সরবরাহ করে পেরে উঠছেন না। তা ছাড়া লকডাউনে ট্রেন বন্ধ থাকাতেও সমস্যা হচ্ছে, আগে বেরিলি থেকে যেদিন ঘুড়ি জম্মু তাওয়াই বা অকালতখত এক্সপ্রেসে তোলা হত, তার পরেরদিন চলে আসত। এখন ঘুড়ি আসছে গতিধারা সেফ এক্সপ্রেসে, লেগে যাচ্ছে ১৪-১৫ দিন। তবে উত্তর প্রদেশের ঘুড়ি বিশ্বকর্মা পুজোয় লাগে না, পুজোর ঘুড়ি তৈরি হয় এ রাজ্যেই, মূলত ডায়মন্ডহারবার এলাকার ঝিঙের পোলে। শুধু বিশ্বকর্মা পুজোয় নয়, মকর সংক্রান্তিতে গুজরাত, পঞ্জাবেও যায় পশ্চিমবঙ্গের ঘুড়ি, যায় গণেশ পুজোর সময় মুম্বই, স্বাধীনতা দিবসে দিল্লিতেও। এ রাজ্যের ঘুড়ির চাহিদা বেশি, কারণ দাম কম। এক একটা ঘুড়ি পড়ে ৫-৬ টাকা করে, যেখানে মোরাদাবাদের ঘুড়ির দাম ১৫-১৮ টাকা।
ঘুড়ির বাজারের সিংহভাগ কাগজের ঘুড়ির দখলে। ৪.৭, অজন্তা, ত্রিবেণী এই সব কাগজের ঘুড়ি তৈরি হয়। বড়বাজার থেকে কাগজ যায় ডায়মন্ডহারবারে, অসম থেকে আসে ঘুড়ির বিশেষ কাঠি, যায় মেটিয়াবুরুজে। সেখানে ছোলা হয়, সাইজ করা হয়। তারপর যায় ডায়মন্ডহারবারে। সেখান থেকে তৈরি ঘুড়ি ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। তবে বাচ্চারা পছন্দ করে কার্টুন আঁকা প্লাস্টিকের ঘুড়ি। মুখপোড়া, বলমার, চাপরাশ, হাফ চারপাশ পরিচিত ঘুড়ি, বরাবর চলছে এ সব। তবে এখন বেশি চলছে ঘুড়ির মধ্যে জগন্নাথের মুখ আর ঘুড়ি জুড়ে বড় চাঁদ।
চিনা মাঞ্জার বদনামের কারণে ঘুড়ির বাজার মার খেয়েছে কি? শুভজিৎ জানাচ্ছেন, চিনা মাঞ্জা বলে কোনও মাঞ্জা হয় না, চিন থেকে এ দেশে কোনও মাঞ্জা আসে না। প্লাস্টিকের কোটিং করা ধারালো ওই মাঞ্জা মূলত ব্যবহার করা হয় মাছ ধরার জন্য ছিপের সুতোয়, আসে বেনারস, লুধিয়ানা, অমৃতসর থেকে। বেরিলির সুতোর দাম যেখানে হাজার মিটারে দেড়-দু’হাজার টাকা, প্লাস্টিকের সুতোর দাম হাজার মিটারে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে একটা সময় খুব চাহিদা ছিল এই মাঞ্জার। কিন্তু এখন এই মাঞ্জার বিক্রি অনেক কমেছে, বিশেষ করে কলকাতা হাইকোর্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে।
১৫-১৭ বছর আগে যাঁরা শেষ ঘুড়ি কিনেছিলেন, তাঁরাও এ বছর ফিরে আসছেন ঘুড়ির দোকানে। পেশায় চিকিৎসক থেকে পুলিশকর্মী- ঘুড়ি প্রেমীদের দলে কে নেই! বলছেন, লকডাউনে ঘরে বসে বিরক্তি ধরে গিয়েছে, আবার ঘুড়ি ওড়াতে চান। ফলে করোনার হাত ধরেই আবার ফিরে এসেছে ঘুড়ি ওড়ানোর মাতাল করা নেশা, রঙবেরঙের ঘুড়িতে ভরে উঠছে পুজোর আগের ঝকঝকে আকাশ।
Election Results 2024
(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
লকডাউনে ঘরে বসে বিরক্তি, ঘুড়ি ওড়ানোর মাতাল করা নেশায় মজছে বাঙালি, বাম্পার বিক্রি, জোগান দিতে হিমসিম দোকানিরা
মনামী বন্দ্যোপাধ্যায়
Updated at:
14 Sep 2020 11:34 AM (IST)
১৫-১৭ বছর আগে যাঁরা শেষ ঘুড়ি কিনেছিলেন, তাঁরাও এ বছর ফিরে আসছেন ঘুড়ির দোকানে। পেশায় চিকিৎসক থেকে পুলিশকর্মী- ঘুড়ি প্রেমীদের দলে কে নেই! বলছেন, লকডাউনে ঘরে বসে বিরক্তি ধরে গিয়েছে, আবার ঘুড়ি ওড়াতে চান।
NEXT
PREV
খবর (news) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -