কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান : দামোদরের ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা দোফসলি ও তিনফসলি জমি। চোখের সামনে দামোদরের গর্ভে জমি চলে যেতে দেখে মাথায় হাত চাষিদের। এমনকী যে কোনও দিন চাষিদের সেচের একমাত্র ভরসা রিভার পাম্পও তলিয়ে যেতে পারে দামোদরের গর্ভে, এমনই আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অবিলম্বে পাড় বাঁধানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। আপাতত ভেটিভার ঘাস লাগিয়ে ভাঙন আটকানোর চিন্তাভাবনা করছে প্রশাসন।


জামালপুরের জোৎশ্রীরাম অঞ্চলের অমরপুর, শিয়ালি, মাঠশিয়ালি, কোরা, মুইদিপুর সহ বেশ কিছু এলাকায় প্রতি বছরই বর্ষার সময় নদ ভাঙন চরম আকার নেয়। অভিযোগ, ভাঙনের জেরে প্রতি বছরই একটু একটু করে চাষের জমি দামোদরের গর্ভে চলে গেছে। আজ পর্যন্ত এই সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হয়নি।


পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা  দামোদরের ভাঙনের কবলে। গ্রামগুলি দামোদরের প্রায় আড়াই থেকে তিন কিমি পাড়ে এলাকায় ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে চাষ জমি রক্ষা করবেন সেকথা ভেবেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই এলাকার চাষিরা। 


জামালপুরের অমরপুর এলাকার কৃষক শেখ নজরুল ইসলাম। নদের পাড়ে তাঁদের পৈত্রিক আড়াই বিঘে জমি ছিল। দামোদরের ভাঙনের কবলে পড়ে ৪ কাঠা জমি আছে। আবার শেখ তহিদ রহমানের ৯ বিঘে জমির মধ্যে ১০ কাঠা জমি অবশিষ্ট আছে। তাঁদের দাবি, নদের ভাঙনের ফলে বিঘের পর বিঘে জমি দামোদরের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। ঋণ নিয়ে চাষ করতে হচ্ছে। জমি চলে গেলে ঋণ কীভাবে শোধ করব এবং খাবই বা কী ? তাঁদের আরও দাবি, ভাঙনের ভয়াবহতা এতইটাই যে এলাকায় থাকা রিভার পাম্পের ট্রান্সফরমার দামোদরের পাড় থেকে মাত্র ৭ ফুট দূরে আছে। যে কোনও দিন তলিয়ে যেতে পারে রিভার পাম্পও।


প্রতি বছরই বর্ষার সময় দামোদর তার ভয়াল রূপ ধারণ করে। তার উপর দোসর হয় ডিভিসির ছাড়া জল। সেই জলে দামোদরের নিম্ন অববাহিকার অধিকাংশ গ্রামই প্লাবিত হয়। সমস্যা আরও প্রবল আকার ধারণ করে ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ালে। এ যেমন এক বিপদ। ঠিক তেমনই জল কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ভাঙন। চাষিদের দাবি, ভাঙনের ফলে ইতিমধ্যেই দামোদর প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ফুট চওড়া হয়েছে এই সমস্ত এলাকায়।


বিঘের পর বিঘে চাষের জমি ভাঙনের ফলে দামোদরের গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে দেখে একপ্রকার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানান, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ইতিমধ্যেই ব্লকের তরফে রিপোর্ট জেলা কৃষি দফতরে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চাষিরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান সেই দিকটি দেখা হচ্ছে। তাছাড়াও ছোট ছোট ধাপে পাড় বাঁধানোর পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হচ্ছে। চটজলদি ব্যবস্থা হিসাবে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ভাঙন রোধে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে ভেটিভার ঘাস লাগানোরও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী মাস থেকেই ঘাস লাগানোর কাজ শুরু হবে।