নয়াদিল্লি: দীর্ঘ আট দশকেরও বেশি সময় ধরে নেই তিনি। কিন্তু ইহলোক ত্য়াগ করেও বাঙালি তথা ভারতীয় পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। এবার চিনের রাজধানী বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি বসল। চিনের স্বনামধন্য শিল্পী ইউয়ান শিকুন কবির মূর্তিটি তৈরি করেছেন। (Rabindranath Tagore)
শনিবার বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। ‘সঙ্গমম’ নামের একটি আলোচনাসভার আয়োজনও হয়, যার বিষয়বস্তু ছিল ভারতীয় দার্শনিক ঐতিহ্য। সেখানেই রবীন্দ্রনাথের মূর্তির উন্মোচন করেন চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রদীপ রাওয়ত। (China News)
মূর্তি উন্মোচন করে প্রায় একশতক আগে কবির চিনসফরের প্রসঙ্গও তোলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। তিনি জানান, একশতক আগে রবীন্দ্রনাথের চিনসফর দুই দেশের জন্যই একটি মাইলফলক ছিল। তাঁর মানবিকতার বার্তা আজও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে দুই দেশকে। পাশাপাশি, চিনের কিংবদন্তি কবি শু ঝিমো এবং সমাজকর্মী লিয়াং কিচাওয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথেক সখ্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
চিনা শিল্পী ইউয়ানকে তাঁর শিল্পকর্মের জন্য চেনে গোটা বিশ্ব। এর আগে, মহাত্মা গাঁধীর মূর্তিও তৈরি করেন তিনি, যে মূর্তিটি বেশ অন্যরকম। বই হাতে মহাত্মার নিখুঁত মূর্তি গড়েন তিনি। ২০০৫ সালে চায়োনাঙ্গ পার্কে সেটি বসানো হয়, যেখানে প্রতিবছর গাঁধী জয়ন্তী পালন করে ভারতীয় দূতাবাস। সেই তিনিই রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটি তৈরি করেছেন।
জীবিতকালে তিন বার চিন সফরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। চিনে তাঁর অনুরাগীর সংখ্য়াও নেহাত কম নয়। রবীন্দ্রনাথের জন্যই বহু চিনা নাগরিক বাংলা শেখেন। ২০০৯ সালে চিনে একটি সমীক্ষা হয়, যেখানে চিনের অধুনিকীকরণের জন্যে যে ৫০ জন বিদেশি নাগরিককে কৃতিত্ব দেওয়া হয়, সেই তালিকায় অন্যতম নাম ছিল রবীন্দ্রনাথ এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর।
চিন সম্পর্কে নিজের ভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথও। চিনকে ভারতের নিকটাত্মীয় মনে করতেন তিনি। তাঁর ধারণা ছিল, সভ্যতার দিক থেকে চিন এবং ভারতের মূল্যবোধের মিল রয়েছে। রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের পরিবর্তে শান্তি প্রাধান্য পায় দুই দেশের কাছে। ১৯২৪ সালে চিনসফরের সময় দুই দেশের মধ্যে গভীর সংযোগ তৈরি নিয়ে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পশ্চিমি দেশকে অনুসরণের পরিবর্তে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভাল বোঝাপড়া তৈরি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বভারতীতে 'চিনা ভবন'ও গড়েন তিনি, যাতে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ও জ্ঞানের আদানপ্রদান ঘটে।