কলকাতা: গতবছর ক্লাবগুলিকে ২৫ হাজার টাকা করে পুজোর অনুদান দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এবছর তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা করার ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বলেছিলেন, এ বার পরিস্থিতি খারাপ। তাই পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে ভালবাসার উপহার দেওয়া হবে।
সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা। অনুদান দেওয়ার কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা নিয়ে শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছে উচ্চ আদালত। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘মুখ্যমন্ত্রী টাকা দেওয়ার সময় যা বলেছেন, পরে বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে তা মিলছে না।’
আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে হাতিয়ার করেই ময়দানে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হলেন।
পুজো কমিটিগুলিকে অনুদান সংক্রান্ত মামলায়, বৃহস্পতিবারই আদালতের বেশকিছু প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, অনুদান কি শুধু দুর্গাপুজোতেই দেয় সরকার? না কি অন্য উৎসবেও দেওয়া হয়? ঈদেও কি তা দেওয়া হয়েছিল? যেভাবে ইচ্ছে টাকা দেওয়া যায় কি? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কি এই ভেদাভেদ করা যায়? এটা কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়?
জবাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানিয়েছিলেন, ৯৫ শতাংশ ক্লাবকে ইতিমধ্যেই অনুদান দেওয়া হয়েছে। উপযুক্ত নিয়ম মেনেই অনুদান দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকাও। আদালতের পর্যবেক্ষণ, দল নির্বিশেষে প্রত্যেকে আমলাতন্ত্রের মেরুদণ্ড ভেঙেছে। বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘আমলাতন্ত্র মজবুত হলে এই অবস্থা হয় না। ‘বিচার-বুদ্ধিতে আমলারা আপনাদের (রাজনৈতিক নেতাদের) থেকে এগিয়ে’।
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ লক্ষ ছঁইছুঁই! বর্তমানে যা ৭৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৪৬৯-য় দাঁড়িয়ে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষেরও বেশি (৩ লক্ষ ৯ হাজার ৪১৭)। দেশে মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে (১ লক্ষ ১২ হাজার ১৬১)। বাংলায় মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছুঁইছুঁই!
এই পরিস্থিতিতে পুজোয় সকলকে সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চায়, সংক্রমণের জন্য যেখানে স্কুল-কলেজ বন্ধ, সেখানে পুজোর অনুমতি দেওয়া হল কীভাবে?
বৃহস্পতিবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, কলকাতায় কতগুলি দুর্গাপুজো হয়? অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, প্রায় ৩ হাজার। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এই ৩ হাজার পুজোতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কত পুলিশ কর্মী থাকেন? সরকার পক্ষের জবাব, মোট ২৫ হাজার পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তায় থাকবেন।
তখন বিচারপতি জানতে চান, ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্লু-প্রিন্ট কী? কী কী সুরক্ষাবিধি মেনে চলছেন? রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের জবাব - ব্লু-প্রিন্ট তৈরি। যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকার পর্যাপ্ত পুলিশি আয়োজনের কথা বললে, এদিন আদালত প্রশ্ন করে, সব কাজ যদি পুলিশই করে, তাহলে ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়ার যুক্তি কোথায়?
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারই ভার্চুয়াল পুজোর উদ্বোধনে আরও একবার কোভিড নিয়ম মেনেই সবাইকে পুজো উপভোগ করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, আমরা পুজো বন্ধ করতে চাই না। দুর্গা পুজো বন্ধ করাও উচিত নয়। দুর্গাপুজো ঘরের মধ্যে করা সম্ভব নয়। সবাই মাস্ক পড়ে ঠাকুর দেখবেন। বেশি করে এক্সিট রাখবেন। ভাইরাস বেরিয়ে যায়।