নয়াদিল্লি: ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত বারো ক্লাসের এক ছাত্রের। চাঁদ মহম্মদ নামে ছেলেটির মা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, কিন্তু চিকিত্সা করানোর সঙ্গতি নেই পরিবারের। সে নিজে মেডিসিন নিয়ে পড়তে চায়, ভাইবোনের স্কুলের ফি-র টাকাও বাকি। তাই ভয়, সংকোচ ঝেড়ে ফেলে কোভিড-১৯ এ মৃতদের সত্কারে হাত লাগাচ্ছে সে। উত্তরপূর্ব দিল্লির সিলামপুরের বাসিন্দা ২০ বছরের ছেলেটির দাদার লকডাউনে কৃষ্ণনগর মার্কেটে মালপত্রের দোকানের কাজটা গেছে। ভাইদের ছুটকো-ছাটকা কাজ করে যে আয় হয়, আর প্রতিবেশীরা যা দয়া করে দেয়, তাতেই দিন চলছে পরিবারের। এক সপ্তাহ আগে চাঁদ একটি কোম্পানিতে ঢোকে যারা তাকে দিল্লির লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে ঝাড়ুদারের কাজে লাগিয়েছে। বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ। তাকে করোনাভাইরাসে মৃতদের দেহ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়। চাঁদ বলেছে, একটা কাজ চাই, কিন্তু আর কোনও রাস্তাই নেই। জানি, বিরাট বিপদ, ঝুঁকি আছে। সংক্রমণের ঝুঁকি আমার ক্ষেত্রে অনেক বেশি। তবু কাজটা আমার চাই। তিন বোন, দুভাই, বাবা-মাকে নিয়ে আমাদের পরিবারে অর্থাভাব। এখনই মায়ের খাবার, ওষুধ দরকার। ভাইরাস সংক্রমণ থেকে হয়তো রক্ষা পাব, কিন্তু খিদের জ্বালা থেকে রেহাই নেই।
তিন বোন স্কুলে পড়ে। তার স্কুলের ফি এখনও বাকি। প্রথম মাইনের টাকায় কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে বলে আশা তার। চাঁদ বলেছে, কাজে বেরনোর আগে নমাজ পড়ি। আমার ভরসা আছে সর্বশক্তিমানের ওপর। তিনি আমায় রক্ষা করবেন, পথ দেখাবেন।
কিন্তু সে উদ্বিগ্ন কেননা তার মতো কর্মীরা বিরাট বিপদ, ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করে, কিন্তু নিয়োগকারী বেসরকারি সংস্থা কোনও বিমার সুবিধা দেয় না। দিনে ২-৩টি দেহ নাড়াচাড়া করতে হয় তাকে, আরেক সুইপার সঙ্গে থাকে। চাঁদ বলেছে, এখন দুনিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজের পারিশ্রমিক মাসে প্রায় ১৭০০০ টাকা। আমাদের মৃতের দেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে শ্মশানে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে দেহ নামিয়ে রাখতে হয় স্ট্রেচারের ওপর। পুরো কাজটা করতে হয় পিপিপি পরে। জিনিসটা খুব ভারী। চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়, দমবন্ধ হয়ে আসে। গরমে ভিতরে ঘেমে উঠি। মঙ্গলবার তাকে একাই একটা দেহ ওঠাতে, নামাতে হয়েছে। সে বলেছে, এক ডাক্তারকে বলতে শুনেছি, দেহটা মর্গে পড়ে ছিল এক মাস। কোনও দাবিদার নেই। দেহটা যে মুড়েছিল, সে ঠিকঠাক কাজ করেনি। দেহটা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামাতে গিয়ে তা থেকে কিছু তরল গড়িয়ে পড়ে আমার গায়ে।
আধার কার্ড, ভোটার কার্ড জমা রেখে সুদের কারবারীদের কাছ থেকে কম সুদে টাকার ব্যবস্থা করতে গিয়েছিল বলেও জানিয়েছে চাঁদ।
জানে এছাড়া কোনও উপায়ও নেই, তবে পরিবারের লোকজন, বিশেষত বাবা-মা তার পেশা নিয়ে গভীর উদ্বেগে থাকে বলে জানিয়েছে চাঁদ। বলেছে, রোজ বাবা-মা জানতে চায়, আজ কী হল? আমার সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করে। মা খুব কান্নাকাটি করে, আমি তাকে বোঝাই।
রোজ কাজ শেষে বাড়ি ফিরেই সে স্নান করে, পরিবারের বাকিদের থেকে দূরে থাকে বলে জানিয়েছে চাঁদ। সে বলেছে, আমি সবরকম আগাম সুরক্ষা নিই। কিন্তু কখন কী থেকে কী হয়ে যায়, কেউ বলতে পারে?