কলকাতা: ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ড নিয়ে এবার তৎপর হল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য সরকারকে চিঠি দিল কেন্দ্র।  চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ভুয়ো ভ্যাকসিন নিয়ে অভিযোগে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। ব্যাখ্যা চেয়ে ২ দিনের মধ্যে রিপোর্ট চাইল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।


চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে উল্লেখ করা হয়েছে, কো-উইনের মাধ্যমে হয় টিকাকরণ, মেলে সার্টিফিকেট। এ নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য জানানো আছে রাজ্যগুলিকে। সঠিক নজরদারি না থাকলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।




উল্লেখ্য, ভ্যাকসিনকাণ্ডে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে গত শনিবার চিঠি দেন শুভেন্দু অধিকারী।  চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, ধৃত দেবাঞ্জন দেবের উদ্যোগে পুরসভার ব্যানারে, ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প হয়েছে কসবায়। সোনারপুর, আমহার্স্ট স্ট্রিটেও, তৃণমূল সরকারের নানা অনুষ্ঠানের মতো নীল-সাদা বেলুনে সাজানো ক্যাম্প হয়েছে। শিবিরগুলিতে কয়েকশো মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সবটাই হয়েছে, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের নজরদারিতে। এখন বড় প্রশ্ন হল, অভিযুক্তের দাবি অনুযায়ী এগুলি কি সত্যিই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন? যদি তা হয়, তাহলে বড় প্রশ্ন ওঠে, সরকারের কাছে থাকা ভ্যাকসিন প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের অনুমতি ছাড়া কী করে বাইরে গেল? যদি, সেগুলি কোভিড ভ্যাকসিন না হয়, তাহলে এখনই তদন্তের প্রয়োজন। কোনও বিষাক্ত ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, না কি হামের ভ্যাকসিন না কি শুধু জল দেওয়া হয়ছিল- তা দেখতে হবে। চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারী আরও উল্লেখ করেন, এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কারও মৃত্যু হলে, তা কেন্দ্রের ঐতিহাসিক গণটিকাকরণ অভিযানের পক্ষে খারাপ দৃষ্টান্তই শুধু নয়, অভিযানের বিশ্বাসযোগ্যতাও নষ্ট করবে। দেবাঞ্জনের প্রভাবশালী-যোগের অভিযোগের ক্ষেত্রে, শাসকদলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে তার বিভিন্ন ছবির কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেন শুভেন্দু।


খোদ কলকাতার বুকে ভুয়ো করোনা ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প। রীতিমতো সাজিয়ে-গুছিয়ে। পুরোদস্তুর কলকাতা পুরসভার ক্যাম্পের ধাঁচে। আর দূরত্ব কসবা থানা থেকে মেরেকেটে ১ কিলোমিটার। অর্থাৎ পুলিশের এক্কেবারে নাকের ডগায়। আর তাও এক-দু’দিনের ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প নয়। ১০ থেকে ১২দিন ধরে চলেছে ভুয়ো ক্যাম্প। বিশ্বাসে ভর করে প্রতিদিন গড়ে দেড়শো জন। অর্থাৎ প্রায় প্রায় হাজার দেড়েক মানুষ। লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিনও নিয়ে নেন। শুধু কসবাতেই নয়, উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজেও ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করেন দেবাঞ্জন। কলেজ অধ্যক্ষের দাবি, কলকাতা পুরসভার জয়েন্ট কমিশনার পরিচয়ে প্রথমে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি করে কলেজ কর্তৃপক্ষের আস্থা অর্জন করেন দেবাঞ্জন। এরপর ১৮ জুন কলেজে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। অধ্যাপক, প্রাক্তনী ও ছাত্র ছাত্রী মিলে ৭২ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন।। অধ্যক্ষের দাবি, কোভিশিল্ডের পাশাপাশি স্পুটনিক ভি-ও দেওয়ার কথা জানান দেবাঞ্জন। 


ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডের পর্দাফাঁসের পর প্যান্ডোরার বাক্স খুলে বেরিয়ে আসছে দেবাঞ্জনের একের পর এক কীর্তি। খাস কলকাতার বুকে এই ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতিও। জানা গিয়েছে, পুরসভার জয়েন্ট কমিশনার পরিচয় দিয়ে মেহেতা বিল্ডিংয়ের একটি দোকান থেকে ইঞ্জেকশন কিনেছিল দেবাঞ্জন। ভুয়ো কাগজপত্র বানিয়ে ওই ইঞ্জেকশন কেনে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। কর্ণধার জানিয়েছেন, দু’দফায় দেবাঞ্জন ইঞ্জেকশন কিনেছিল।


সূত্রের দাবি, ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ১ বছর ধরে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিল ভ্যাকসিনকাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জন দেব। করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরই ছক সাজিয়ে ফেলে সে। শুরুতে পিপিই, মাস্কের ব্যবসা করবে বলে ঠিক করলেও ধীরে ধীরে রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে একের পর এক ভ্যাকসিন ক্যাম্পের আয়োজন করতে থাকে।  স্পুটনিকের ভায়ালের লেবেলের ফটোকপি লাগিয়ে প্রতারণা করা হয়। কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে নিজেই কম্পিউটারে তৈরি করে জাল লেবেল।