নয়াদিল্লি: নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব। সংসদের বাদল অধিবেশনে নয়া বিল আনছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় (Rajya Sabha) বিলটি উত্থাপিত হবে। সেটি পাস হলে, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর রাখা হবে না সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগে এই নয়া বিল পাস করানোর উদ্যোগ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।


বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় তোলা হতে পারে চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনার্স (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কন্ডিশন্স অফ সার্ভিসেস অ্যান্ড টার্মস অফ অফিস) বিল ২০২৩। তাতে প্রস্তাব রয়েছে যে, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং  নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং প্রধানমন্ত্রী দ্বারা মনোনীত একজন মন্ত্রী। কমিটির বৈঠক ডাকবেন প্রধানমন্ত্রীই। সেখান থেকে নাম যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনিই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন। (Election Commissioner Appointment)


নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে এ বছর মার্চ মাসেই গুরুত্বপূর্ণ রায় শোনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনার নিয়োগের কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাঁদের সুপারিশ মেনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় নাকচ করতেই এই নয়া বিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: ‘বিজেপি-র মেরুকরণের রাজনীতিতেই হিংসা’, ‘ মণিপুরে ভারতমাতার হত্যা’, লোকসভার রেকর্ড থেকে বাদ গেল রাহুলের মন্তব্য


নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব থাকা এই বিলটি রাজ্যসভায় তোলা হচ্ছে জানাজানি হতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি সংঘাতের পথে হাঁটছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।



এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরাও। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, 'আমি আগেই বলেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টকে মানেন না। ওঁর বার্তা একেবারে পরিষ্কার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পছন্দ না হলেই, আইন এনে রায় পাল্টে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী নিয়ে যেখানে সুপ্রিম কোর্টকে মানছেন না, দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্ট নিরপেক্ষ কমিটি গড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাল্টে দিতে মোদিজি এমন কমিটি বানাচ্ছেন, যেখানে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে উনি পদে বসাবেন। এতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতার উপর প্রভাব পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর একের পর এক সিদ্ধান্ত ভারতীয় গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে'।


সাম্প্রতিক কালে একাধিক বিষয়ে দেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার, সে দিল্লির আমলা নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্কিত অর্ডিন্যান্স হোক বা বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া। দিল্লিতে আমলা নিয়োগের ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকবে বলে রায় দেয় আদালত। তার পরেও অর্ডিন্যান্স জারি করে নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ রাখে কেন্দ্র। অতি সম্প্রতি সেই বিলও পাস করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র। তাতেই এবার নয়া মাত্রা যোগ করতে চলেছে এই বিল।