নয়াদিল্লি: মণিপুর হিংসা নিয়ে আগাগোড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করে গিয়েছেন তিনি। বিজেপি-র মেরুকরণের রাজনীতিই উত্তর-পূর্বের রাজ্যটিতে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। লোকসভার অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনা থেকে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) সেই ভাষণের বেশ কিছুটা অংশ বাদ দেওয়া হল। বিজেপি-ই মণিপুরে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে যে অভিযোগ তুলেছিলেন রাহুল, সেটি বাদ গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। (No Confidence Motion)
লোকসভা সেক্রেট্যারিয়টের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাহুলের বক্তৃতা থেকে 'হত্যা', 'হত্যাকারী', 'খুন', 'দেশদ্রোহী'র মধ্যে শব্দ সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ আসে। বুধবার দুপুরে রাহুলের বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর নির্দেশ আসে। সেই মতোই সিদ্ধান্ত নিয়েছে লোকসভার সচিবালয়।
মণিপুর হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ভাঙাতে সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিরোধীরা। বুধবার সেই নিয়ে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা চলাকালীন বক্তৃতা করেন রাহুল। সেখানে চাঁচাছোলা ভাষায় কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মণিপুরকে ভারতের অংশ বলে মনে করেন না, তাই মণিপুরে আগুন জ্বললেও একটি বারের জন্যও সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি বলে আক্রমণ শানান রাহুল।
শুধু তাই নয়, মণিপুরে হিংসার জন্যও সরাসরি বিজেপি এবং তাদের মেরুকরণের রাজনীতি দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাহুল জানান, গোটা দেশে কেরোসিন সরবরাহ করছে বিজেপি। তাদের ঘৃণা এবং বিভাজনের রাজনীতিতে মণিপুর জ্বলছে, জ্বলছে হরিয়ানাও। বিজেপি-র এই মেরুকরণের রাজনীতির জেরে মণিপুরে ভারমাতা খুন হয়েছেন, বিজেপি মণিপুরে ভারতকে খুন করেছে বলেও মন্তব্য করেন রাহুল।
রাহুলের সেই মন্তব্যে বুধবার দুপুরেই হই-হট্টগোল শুরু হয়ে যায় লোকসভায়। রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন বিজেপি সাংসদরা। স্পিকার ওম বিড়লাও রাহুলকে অনুরোধ করেন এর মধ্যে ভারতমাতাকে না টানতে। কিন্তু রাহুল জানান, সনিয়া গাঁধী যেমন তাঁর মা, দেশও তাঁর কাছে মা। মণিপুরে সেই মা-কেই হত্যা করা হয়েছে। বিজেপি-র উদ্দেশে তিনি বলেন, "আপমানরা ভারতমাতার রক্ষাকর্তা নন, হত্যাকারী। দেশপ্রেমী নন, আপনারা দেশদ্রোহী।"
বুধবার রাতে রাতে রাহুলের ভাষণ থেকে ওই অংশ বাদ দেওয়া হয় বলে খবর। সেই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। বিজেপি সংসদের মর্যাদা খর্ব করছে বলে দাবি তাঁর। বিষয়টি নিয়ে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন অধীর। দেশে একমাত্র সংসদভবনই একমাত্র প্রতিষ্ঠান টিকে রয়েছে, সেটিও বিজেপি ভেঙে দিতে চাইছে বলে দাবি করেন অধীর। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। এর আগে, ফেব্রুয়ারি মাসেও শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে গোপন আঁতাতের অভিযোগ করেছিলেন রাহুল, সেটি বাদ যায় সংসদের রেকর্ড থেকে।