আবীর দত্ত, কলকাতা: লালগড়ে ভোট পর্ব মিটতেই গ্রেফতার ছত্রধর মাহাতো। ২০০৯ সালে রাজধানী এক্সপ্রেস হাইজ্যাকের ঘটনায় তৃণমূল নেতা ছত্রধর মাহাতোকে গ্রেফতার করল এনআইএ। গ্রেফতারের সময় ধস্তাধস্তিতে এক কনস্টেবল আহত হন। ছত্রধরের স্ত্রী অ্যারেস্ট মেমো প্রত্যাখ্যান করেন বলে দাবি এনআইএ-র। 


১২ বছর আগে ঝাড়গ্রামের বাঁশতলায় রাজধানী এক্সপ্রেসে মাওবাদী হামলার ঘটনায় নাম জড়ায় ছত্রধরের। সেই মামলাতেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও বেআইনি কার্যকলাপ বিরোধী আইন বা UAPA-তে তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তৎকালীন জনসাধারণ কমিটির মুখপাত্র ছত্রধর মাহাতোর, যিনি এখন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। লালগড়ে ছত্রধরের বাড়িতে যায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার ৪০ জনের দল। সেখান থেকেই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে। 


 


এতদিন পর, ভোটের মুখে কেন গ্রেফতার, নেপথ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে, মন্তব্য তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের। দেশদ্রোহীদের নিয়ে রাজনীতি বাঞ্ছনীয় নয়, প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্তর।  উল্লেখ্য, এনআইএ-র নোটিশ সত্ত্বেও ছত্রধর মাহাতো তদন্তকারী সংস্থার সামনে হাজির হননি বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ সম্পর্কে গতকাল ছত্রধর বলেন, হাজিরা দিচ্ছি না, এমনটা নয়। শারীরিক অসুস্থতার জন্য যেতে পারিনি, তা আদালত ও এনআইএ-কে জানিয়েছি। কারণও জানিয়েছি। আমি আইনে আস্থাশীল। আদালতকে সম্মান করি। আমাকে বলা হয়েছে, তাই এনআইএ-র সম্মুখীন হয়েছি। ছত্রধর আরও বলেন, আমি ১০ বছর জেলে ছিলাম। যে মামলা চলছিল, বিচারাধীন, সেই মামলা হাতে নিয়ে নেওয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিচারধীন মামলা, তাই এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। 


প্রায় ১১ বছর পর ২০২০-র শুরুতে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন ছত্রধর। ছাড়া পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য স্তরের কমিটিতে নেওয়া হয় তাঁকে। দলের রাজ্য সম্পাদক করা হয় তাঁকে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে জঙ্গলমহলে জোর ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। এজন্য রাজ্য বিধানসভা ভোটের কঠিন  লড়াইয়ের আগে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে যাওয়া জঙ্গলমহলে ফের জোড়াফুলের জমি শক্ত করার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। 


উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত লালগড় কেন্দ্রে গতকাল ভোট দেন ছত্রধর মাহাতো । সস্ত্রীক ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দিয়ে ছত্রধর মাহাতো বলেন, "১১ বছর পর আবার ভোট দিতে এলাম। তাই অনুভূতিটা অন্যরকম। এর আগে আমি ভোট দিয়েছি। কিন্তু তখন আমার দল ক্ষমতায় ছিল না। কিন্তু এইবার যখন ভোট দিতে এলাম তখন আমার দল ক্ষমতায় আছে। আবারও ক্ষমতায় আসবে। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। তাই অনুভূতিটা অন্যরকম। দলের দুর্দিনে ছিলাম, এখনও দলে রয়েছি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে মর্যাদা দিয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। এজন্য নিজেকে নিংড়ে দিয়ে দলকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।"