মুম্বই: জাতীয় নৌদিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খোদ উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু তার পর ন'মাসও পেরোল না। মুম্বইয়ে ভেঙে পড়ল ছত্রপতি শিবাজির মূর্তি। ৩৫ ফুট উঁচু ইস্পাতের মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল ইস্পাত দিয়ে। সোমবার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেটি। ঘটনাস্থল থেকে যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে মূর্তিটিকে টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। মূর্তিটি তৈরি করতে রাজ্য সরকারের তরফে ২.৩৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল নৌবাহিনীকে। সবমিলিয়ে মোটা টাকা খরচ পড়ে। (Shivaji Maharaj Statue Collapses)


এত ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন হলেও, ন'মাসও কেন মূর্তিটি টিকল না, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এই ঘটনাকে "দুর্ভাগ্যজনক' বলে উল্লেখ করেছেন। আবারও মূর্তি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু 'মারাঠি সংহিতা'র কথা উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ)কে আক্রমণ করতে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। (Shivaji Maharaj Statue)


ঠিক কী কারণে ন'মাসের মাথায় এমন দশা হল মূর্তিটির, তার সদুত্তর মেলেনি এখনও পর্যন্ত। তবে এ নিয়ে একাধিক তত্ত্ব উঠে আসছে। গত দু'-তিন দিন ধরে মহারাষ্ট্রে ভারী বৃষ্টি এবং ব্যাপক ঝঞ্ঝা চলছে। সিন্ধুদুর্গ জেলার যে রাজকোট ফোর্টে মূর্তিটি বসানো ছিল, সেখানেও গতকাল ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমটার গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল বলে জানিয়েছেন শিন্ডে। 



প্রবল হাওয়ার দাপটেই মূর্তিটি ভেঙে গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সরকারি সূত্রে। কিন্তু এই ঘটনায় একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে। সিন্ধুদুর্গের গার্ডিয়ান মন্ত্রী, যিনি পূর্ত দফতরের দায়িত্বেও রয়েছেন, সেই রবীন্দ্র চহ্বান জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ঠিকাদার জয়দীপ আপ্টে এবং উপদেষ্টা চেতন পাটিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। জালিয়াতি, অশুভ আঁতাত এবং জন নিরাপত্তার সঙ্গে আপসের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।


মূর্তি তৈরিতে ব্যবহৃত মালমশলার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পূর্ত দফতরের অভিযোগ, মূর্তিতে যে ইস্পাত, নাটবল্টু ব্যবহার করা হয়েছিল, তা আগে থেকেই জং ধরা অবস্থায় ছিল। নৌবাহিনীর উপর মূর্তি তৈরির দায়িত্ব ন্যস্ত করা হলেও, তাদের অনভিজ্ঞতার কথাও উঠে এসেছে। এর আগে, জুন মাসে মূর্তিটি মেরামতও করা হয়। তার পরেও স্থানীয় মানুষজন এবং পর্যটকরা মূর্তিটির অবস্থা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নৌবাহিনীর তরফেও তদন্ত শুরু হয়েছে।


কিন্তু গোটা ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে রাজ্যের সরকার। শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) নেতা আদিত্য ঠাকরে বলেন, "ঔদ্ধত্য দেখিয়ে সাত তাড়াতাড়ি মূর্তি তৈরি সারা হয়। মহারাজার মূর্তিটিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করাই লক্ষ্য ছিল, তাই গুণমানের দিকে নজর দেওয়া হয়নি।" শিন্ডে এবং বিজেপি মহারাজাকে অপমান করেছেন বলেও অভিযোগ আদিত্যর। 


বিজেপি কী পরিমাণ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাও এই ঘটনায় প্রমাণিত বলে মত কংগ্রেসের। তাদের মতে, ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মূর্তি উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি। প্রায় আট মাসের মধ্যে ভেঙে পড়ল। দুর্নীতির হাত থেকে মহাপুরুষরাও ছাড় পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করে কংগ্রেস। ছত্রপতি শিবাজির বংশধর, সম্ভাজি ছত্রপতি বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন করতে তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল। আমরা মূর্তি নির্মাণের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলাম কিন্তু তাতে যে মূর্তি নির্মাণ করা হয়, তার আকার এবং গঠন, কোনওটিই সঠিক ছিল না। এক বছরের আগে এভাবে মূর্তি ভেঙে পড়ার নজির নেই মহারাষ্ট্রে।" মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী দীপক কেসরকরের দাবি, ৩৫ ফুটের মূর্তির জায়গায় এবার ১০০ ফুট উঁচু মূর্তি গড়া হবে, যা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।