নয়াদিল্লি: লাদাখে সীমান্ত সংঘাত কিছুটা থিতিয়ে এলেও, ইন্দো-চিন সংঘাত জারি। এবার জলপথে ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলল চিন (South China Sea)। এবার কম্বোডিয়ার কাছে মালাক্কা জলপ্রণালীর কাছে নৌসেনা ঘাঁটি গড়ে তুলল তারা। সেখানে কম্বোডিয়ার নৌসেনা ঘাঁটি ছিল এতদিন, যা  ছিল নিতান্তই ছিমছাম। কিন্তু স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে আড়ে-বহরে বেড়েছে ওই নৌসেনা ঘাঁটি। কম্বোডিয়ার হয়ে চিনই ওই নৌসেনা ঘাঁটি তৈরিতে টাকা ঢেলেছে বলে খবর। আগামী দিনে ওই নৌসেনা ঘাঁটি চিন নিজের কাজে লাগাতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। (India China Conflict)


মালাক্কা প্রণালীর কাছে যে জায়গায় নৌসেনা ঘাঁটি গড়ে তুলেছে চিন, তা ভারত মহাসাগরের সঙ্গে দক্ষিণ চিন সাগরকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বভাবতই তাদের এই পদক্ষেপ চিন্তা বাড়িয়েছে দিল্লির। জলপথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কাছে মালাক্কা জলপ্রণালী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর ওই এলাকা দিয়ে জাহাজের আনাগোনা লেগে থাকে। জলপথে গোটা বিশ্বে যত বাণিজ্য হয়, তার ২৫ শতাংশই হয় ওই মালাক্কা প্রণালী দিয়ে। তাই সেখানে চিনের নৌসেনা ঘাঁটি গড়ে তোলাকে ভাল চোখে দেখছে না কূটনৈতিক মহল। 


চিনের সঙ্গে কম্বোডিয়ার এই সখ্য দিল্লির জন্যও সুখকর নয়। কারণ এ বছর মে মাসেই কম্বোডিয়া সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজা নরোদম সিহামণির সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ভারত-কম্বোডিয়া সম্পর্কে নতুন সূর্যোদয় ঘটতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন মোদি। মানব সম্পদ থেকে পর্যটন, সংস্কৃতি থেকে প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কে জোর দেওয়ার কথা বলেন। তার পর দু’মাসও কাটেনি মালাক্কা প্রণালীতে চিনের উপস্থিতি সামনে এল। ফলে দিল্লির বিদেশনীতিও নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।


বিশ্বের তাবড় দেশের মধ্যে চিনের নৌসেনাই সর্ববৃহৎ। তাদের কাছে ৩৫০-র বেশি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে তা বেড়ে ৪৫০-এর কোটা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করছে আন্তর্জাতিক মহল। এর পাশাপাশি, জলপথে নজরদারি চালাতে কমপক্ষে ৮৫টি নজরদারি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু জাহাজে শত্রুপক্ষের জাহাজ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিও রয়েছে বসানো।


আরও পড়ুন: Imran Khan: পাকিস্তানে গ্রেফতার ইমরান, কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকার সামগ্রী হস্তগত করার অভিযোগ, তালিকায় যা যা...


ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ সংবাদমাধ্যমে বলেন, “কম্বোডিয়া এযাবৎ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে এসেছে। চিনের সামনে দুর্বল হয়ে পড়েনি তারা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতার সামনে মাথানত করেছে তারা। বাধ্য হয়েই চিনের গলা ধরে ঝুলে পড়েছে।”


প্রাক্তন অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ আরও বলেন, “চিন কম্বোডিয়াকে বন্দর তৈরিতে সাহায্য করছে, যাতে প্রয়োজনে ওই বন্দর ব্যবহার করতে পারে চিনের ড্রাগন বাহিনী। আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ লাদাখে নজর রাখতে গিয়ে, তার চেয়ে ঢের গুরুত্বপূর্ণ জলসীমাকে হেলাফেলা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালেই চিন নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছিল। সমুদ্রপথে আধিপত্য বিস্তারের কথা পরিষ্কার জানিয়েছিল তারা। এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বের কাছে উৎপাদনের ভরকেন্দ্র চিন। জলপথেই মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য হয় তাদের। তাই সমুদ্রে আধিপত্য বিস্তারে আগ্রহী তারা।”


দক্ষিণ চিন সাগর এবং ভারত মহাসাগরে চিনের মোকাবিলা করতে ইতিমধ্যেই চতুর্দেশীয় চুক্তি হয়েছে। তাতে শামিল রয়েছে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা। দফায় দফায় ভারত মহাসাগরে একজোট হয়ে মহড়াও দিয়েছে এই চার দেশ।


এর পাশাপাশি, ভারত মহাসাগর সংলগ্ন দেশগুলির সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত। দক্ষিণ চিন সাগরে ড্রাগনের মোকাবিলা করতে এ বছর জুলাই মাসে ভিয়েতনামকে আইএনএস কৃপাণ জাহাজ উপহার দিয়েছে ভারত। তার আগে, ২০২০ সালে মায়ানমারকে আইএনএস সিন্ধুবীর জাহাজ উপহার দেওয়া হয়েছিল দিল্লির তরফে। ফিলিপিন্সকে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতেও সারা হয়েছে চুক্তি। তার পরও জলপথে চিনা আগ্রাসন লাগাতার বেড়ে চলেছে।