নয়াদিল্লি: অতিমারির প্রকোপ কেটে গিয়েছে। কিন্তু সেই নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত। নোভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে এবার আমেরিকার ঘাড়ে দোষ চাপাল চিন। তাদের দাবি, চিনের উহানের গবেষণাগার নয়, করোনাভাইরাস ছড়ায় আমেরিকা থেকে। বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তেরও দাবি তুলল তারা। (COVID-19 Origin)

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে সংক্রমণ ছড়ায় বলে উঠে আসে। সেই নিয়ে লাগাতার চিনের দিকে আঙুল তুলে আসছে আমেরিকা। উহানের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়ায় বলে সম্প্রতি ফের দাবি করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, হোয়াইট হাউস সম্প্রতি একটি COVID ওয়েবসাইট চালু করেছে, যেখানে উহানের গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় বলে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফচিরও সমালোচনা করা হয়েছে ট্রাম্প সরকারের ওয়েবসাইটে। (US-China Conflict)

আর তাতেই ফুঁসে উঠেছে চিন। বুধবার Covid-19 নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে চিন, যাতে সরাসরি আমেরিকার দিকে আঙুল তুলেছে তারা। তাদের দাবি, আমেরিকা থেকেই গোটা পৃথিবীতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এর সপক্ষে তাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলেও দাবি করেছে চিন। তাদের বক্তব্য, ‘নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকারের পরিবর্তে, অন্যের ঘাড়ে দোষ ঠেলছে আমেরিকা। নির্লজ্জের মতো SARS-CoV-2-র উৎস নিয়ে রাজনীতি করে চলেছে’।

চিনের স্টেট কাউন্সিল ইনফর্মেশন অফিস থেকে শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মহলে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে আমেরিকাকে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত তাদের। চিনের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যে সময় করোনা থেকে সংক্রমণ ছড়ায় বলে জানানো হয়েছে, তার চেয়ে ঢের আগে আমেরিকায় COVID-19 ভাইরাসের আগমন ঘটে থাকতে পারে। চিনে সংক্রমণ মহামারির আকার ধারণ করারও ঢের আগেই আমেরিকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।

চার বছর আগে পৃথিবীবাসী যখন করোনাভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত হন, সেই সময়ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন ছিলেন ট্রাম্প। তিনি আগাগোড়াই অতিমারির জন্য চিনকে দায়ী করে এসেছেন। আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা CIA এবং গোয়েন্দা সংস্থা FBI-ও উহানের গবেষণাগারকে করোনার উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এর বিরোধিতাও করেছেন অনেকে। চিনকে দায়ী করার নেপথ্যে বর্ণবিদ্বেষ রয়েছে বলে মত তাঁদের।

চার বছর পর সেই নিয়ে আমেরিকাকেই তুলোধনা করল চিন। তাদের দাবি, আমেরিকা ‘মূক ও বধিরের মতো’ আচরণ করছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে যে প্রশ্নগুলি উঠে আসছে, সোজাসুজি তার জবাব দেওয়া উচিত তাদের। 

২০২০ সালে প্রকাশিত শ্বেতপত্রেও আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল চিন। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ যে দ্রুত গতিতে তাদের সীমান্ত ছাড়িয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ছে, তা বিলক্ষণ জানত আমেরিকা। কিন্তু অতিমারির গুরুত্ব অনুধাবন করার পরিবর্তে, গা-ছাড়া মনোভাব দেখায়। করোনাকে ফ্লু বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, আপনাআপনিই সেরে যাবে। নিজেদের অব্যবস্থা, ব্যর্থতা ঢাকতে চিনকে বলির পাঁঠা বানানো হয়’। 

চিন দাবি করেছে, আমেরিকার মাটি থেকেই ছড়ায় নোভেল করোনাভাইরাস। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সেখানে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ মহামারির আকার ধারণ করে। ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আমেরিকার ন’টি অঙ্গরাজ্য থেকে যে ৭ হাজার ৩৮৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তার মধ্যে ১০৬টি SARS-CoV-2 অ্যান্টিবডি পজিটিভ ছিল। অর্থাৎ খাতায় কলমে করোনা সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার আগেই আমেরিকায় করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মেলে।

আমেরিকার মসনদে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই চিনের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে তাদের মধ্যেকার টানাপোড়েন এই মুহূর্তে কার্যতই যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। আর সেই আবহেই ফের পুরনো বিতর্ক মাথাচাড়া দিল। নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গোটা পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।