নয়াদিল্লি: পরিবর্তিত মানচিত্রে সীমান্ত সংলগ্ন বিতর্কিত তিনটি এলাকাকে নিজেদের বলে দেখানোয় বিতর্ক হয়েছিল আগেই। তার পরেও যে অবস্থান পাল্টায়নি, বুঝিয়ে দিল নেপাল। ১০০ টাকার (নেপালি রুপি) নোট ছাপার জন্য চিনের একটি সংস্থাকে বরাত দিয়েছে তারা। আর তাতে যে মানচিত্র ছাপার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিতর্কিত তিনটি এলাকাকে তার অন্তর্ভুক্তই রাখা হচ্ছে। সেগুলিকে নেপালের এলাকা বলেই দেখানো হচ্ছে বলে খবর। ওই তিন এলাকাকে আবার নিজেদের বলে দাবি করে ভারতও। (Nepal 100 Rupee Note)


নেপাল রাষ্ট্র ব্যাঙ্ক পড়শি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। তারা China Banknote Printing and Minting Corporation-কে নোট ছাপানোর বরাত দিয়েছে। টেন্ডার মারফত চিনের সংস্থা নোট ছাপার বরাত পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নোটের নকশায় অনুমোদন দিয়ে গিয়েছে নেপাল সরকার। ১০০ টাকার নোটে 'নয়া রাজনৈতিক মানচিত্র'ই ছাপার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। (Nepal New Map)


নেপালের ১০০ টাকার নোটে তিনটি বিতর্কিত এলাকা, লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরাকে নিজেদের এলাকা বলে দেখানোর সিদ্ধান্তেই সিলমোহর পড়েছে। ওই তিন এলাকাকে নেপালের বলে দেখানো হবে সেদেশের ১০০ টাকার নোটে। ২০২০ সালের ১৮ জুন নয়া মানচিত্র হিসেবে ওই তিনটি এলাকাকে নিজেদের দেশের অন্তর্গত বলে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয় নেপাল। সেই মতো দেশের সংবিধানেও সংশোধন ঘটায় তারা। চলতি বছরের গোড়াতেই নেপালের নয়া ১০০ টাকার নোটেও সেই পরিবর্তিত মানচিত্র তুলে ধরা হয়।


সেই সময়ই দিল্লির তরফে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। নেপাল মানচিত্র যতই বর্ধিত করে দেখাক না কেন, তাতে সত্য পাল্টে যায় না বলে জানায় ভারত। কিন্তু তার পরও যে নেপাল অবস্থান থেকে সরেনি, আবারও তার প্রমাণ মিলল। তাদের সিলমোহর প্রাপ্ত মানচিত্রই নোটে রাখতে হবে বলে চিনা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩০ কোটি ডলার মূল্যের ১০০ টাকার নোট ছাপার বরাত দেওয়া হয়েছে চিনা সংস্থাকে। 


এ নিয়ে নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে ২০২০ সালেই বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সেদেশের সরকারের। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও তার প্রভাব পড়ে। একতরফা ভাবে, কৃত্রিম ভাবে মানচিত্র বাড়ানোর নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ভারতের সঙ্গে মোট ১৮৫০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে নেপালের। সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড হয়ে গিয়েছে সীমান্ত। 


১৮১৬ সাল থেকে সীমান্ত নিয়ে নেপালের সঙ্গে বিরোধ ভারতের। ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধের পর যে সুগৌলি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে, সেই অনুযায়ী, কালী নদীটিকে নেপালের পশ্চিম সীমান্ত বলে ধরা হয়। তার পূর্বের লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিমপিয়াধুরাকে নেপালের এলাকা বলে ঠিক হয়। কিন্তু ছয়ের দশক থেকে ওই তিন এলাকা ভারতীয় প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৯ সালে বিষয়টি নিয়ে সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। সেবছর নভেম্বরে যে মানচিত্র প্রকাশ করে, তাতে ওই তিন এলাকাকে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। এর পর নেপাল পরিবর্তিত মানচিত্র প্রকাশ করে।