বেজিং: একা একা পর্বতারোহণে গিয়েছিলেন। কোনও রকমে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন তরুণ। টানা ১০ দিন ধরে বরফের মধ্যে আটকে ছিলেন তিনি। বেঁচেছিলেন দাঁত পরিষ্কারের মাজন খেয়ে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হল। (Chinese Hiker Survived on Toothpaste)


চিনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা সুন লিয়াংয়ের বয়স ১৮। পাহাড়-পর্বত চড়ার নেশা রয়েছে তাঁর। গত ৮ ফেব্রুয়ারি একাই বেরিয়েছিলেন পর্বতারোহণে। শাংচি প্রদেশের চিনলিং পর্বতমালার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি, যেখানে গড় উচ্চতাই ২৫০০ মিটার। (China News)


৮ ফেব্রুয়ারি সকালে Ao-Tai Line ধরে এগোতে শুরু করেন সুন। অথচ ২০১৮ সাল থেকে ওই খাড়া পথ বন্ধ রয়েছে। কারণ ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ওই পধ ধরে এগোতে গিয়ে কমপক্ষে ৪৫৬ জন নিখোঁজ হয়ে যান। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বহু পর্বতারোহীই বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ওই পথ ধরে এগোন। কারণ ১৭০ কিলোমিটার বিস্তৃত ওই খাড়াপথই Ao এবং Taibai পর্বতমালাকে সংযুক্ত করেছে।


তরুণ পর্বতারোহী সুনও বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ওই রাস্তাই ধরেন। পর্বতারোহণে এক বছরের অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে, ৪০ হাজার ইউয়ান, জরুরি জিনিসপত্র-সহ মোট ৩২ কেজি ওজন নিয়ে অভিযান শুরু করেন সুন। কিন্তু মাটি থেকে উচ্চতা যত বাড়তে থাকে, ততই কমতে থাকে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা একসময় হিমাঙ্কের নীচে পৌঁছে যায়। সেই সঙ্গে তুষারঝড়, ঘন কুয়াশা ও কম দৃশ্যমানতা। সুনয়ের কাছে থাকা পাওয়ার ব্যাঙ্কটিও ঠান্ডায় জমে যায়। ফলে কারও সঙ্গে যোগাযোগের উপায় ছিল না তাঁর। এমন পরিস্থিতিও এগিয়ে চলেন তিনি। 


তুষারঝড়ের প্রকোপ এড়াতে চলার পথে বড় পাথরের চাঁইয়ের আড়ালে আশ্রয় নেন সুন। কিন্তু অভিযানের পঞ্চম দিনে পর্বতের ঢাল থেকে নীচে পড়ে যান সুন। একরাত জ্ঞান ছিল না তাঁর। পরের দিন জ্ঞান ফিরলে দেখেন খাবারদাবার, মানচিত্র সব হারিয়েছেন তিনি। হাতে চোট পেয়েছেন। সেই অবস্থায় যদি কেউ খুঁজে না পান তাঁকে, ভেবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সুন। তাই উপযুক্ত জায়গার খোঁজ শুরু করে দেন। 


শেষ পর্যন্ত একটি বড় পাথরের চাঁইয়ের আড়ালেই আশ্রয় নেন সুন। তেষ্টা মেটান বরফ চেপে জল বের করে এবং রোদ পেয়ে চুঁইয়ে পড়া ঝরনার জলে। পকেটে মাজনের একটি টিউব পড়েছিল। শ্যাওলা-ছত্রাকের পরিবর্তে সেই মাজন খেয়েই বেঁচে থাকার চেষ্টা শুরু করে দেন। 


এমন অবস্থায় শরীর ভেঙে পড়তে শুরু করে সুনের। শেষ পর্যন্ত দশম দিনে ধোঁয়ার গন্ধ নাকে যায় তাঁর। তাতেই নতুন করে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন সুন। গলা চড়িয়ে নিজের উপস্থিতির জানান দিতে শুরু করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩০ জন উদ্ধারকারীর একটি দল সুনকে উদ্ধার করে। খরচ পড়ে ৮০ হাজার ইউয়ান। তাঁর পরিবারকেই সেই খরচ মেটাতে হয়।