নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধন বিলকে (সিএবি) ‘প্রতারণা, ছলনায় ভরা’, ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যসভায় কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করলেন পি চিদম্বরম। সংবিধান মোতাবেক জন্ম, গোত্র, উত্তরাধিকার ভারতীয় নাগরিকত্বের ভিত্তি, কিন্তু এই বিল প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে নাগরিকত্বের এক একপেশে ব্যাখ্যা হাজির করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রবীণ কংগ্রেস নেতার দাবি, কেন্দ্র ‘তার হিন্দুত্বের এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যেতে’ই এই বিতর্কিত বিল পাশ করাতে চাইছে।
অসম আচরণ, বেআইনি তালিকাভুক্তিকরণ ও চরম একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি-তিনটি কারণে এই বিল সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে বলেও অভিমত জানান ইউপিএ আমলের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
বিলটি শেষ পর্যন্ত আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি অসাংবিধানিক ও খারিজ হয়ে যাবে, এটা অত্যন্ত স্পষ্ট। কেন্দ্র সাহস থাকলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সভায় আমন্ত্রণ করে এনে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ানোর উদ্যোগ নিক, এও বলেন চিদম্বরম। কে এই বিলের পক্ষে আইনি মত দিয়েছেন, জানতে চান চিদম্বরম। সেই সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট সংসদে পেশ করার দাবি জানিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন, আইনমন্ত্রক? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক না অ্যাটর্নি জেনারেল? কেন রাজনৈতিক, ভাষাগত কারণে নির্যাতন নয়, শুধু ধর্মীয় কারণে নির্যাতন নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, শ্রীলঙ্কার হিন্দুদের, ভুটানের খ্রিস্টানদের বিলের বাইরে রাখার কারণ কী? এই বাদ দেওয়া, ঢোকানোর ব্যাপারটা সাধারণ বোধবুদ্ধির বাইরে। তিনি আরও বলেন, এই বিল সংসদের গালে একটা থাপ্পড়। সাংসদদের অসাংবিধানিক কিছু করতে বলা হচ্ছে, তারপর সেই সন্তানকে পাঠানো হবে বিচারবিভাগের কাছে। সেখানে আইনজীবী, বিচারকরা ঠিক করবেন, কাজটা সাংবিধানিক না তা নয়। এটা অসাংবিধানিক বলে জানার পর আমার আশঙ্কা হচ্ছে, সরকার তার হিন্দুত্ব এজেন্ডা চাপিয়ে দিতেই বিলটি পাশ করাতে চাইছে।
বিলটি মঙ্গলবার ৩১১-৮০ ভোটে লোকসভায় পাশ হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্যে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা অ-মুসলিমদের এদেশের নাগরিকত্ব প্রদান। আজ রাজ্যসভায় বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, এই বিলের জন্য এদেশে ইতিমধ্যে বসবাসকারী মুসলিমদের কোনও ক্ষতি হবে না। বিলটি ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে, এমন মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। তাঁরা ভারতের নাগরিক আছেন, থাকবেনও সবসময়। ভারতে থাকা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোনও বৈষম্য হয় না। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি থেকে পালিয়ে আসা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।