নয়াদিল্লি: বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ ঘোষণার মামলায় আজও সিদ্ধান্ত হল না। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের অবসরের আগে এই মামলার রায়ঘোষণায় অসম্ভাব্যতা রয়েছে বলেও জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ গত ১৭ অক্টোবর এ নিয়ে শুনানি শুরু করে। বুধবার ফের শুনানি শুরু হলে অন্য এক আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, হলফনামা জমা দিতে অন্তত আরও একদিন সময় লাগবে তাঁর। তাতেই ফের শুনানি স্থগিত হয়ে গেল। (Marital Rape Hearing)
আগামী চার সপ্তাহের জন্য বৈবাহিক ধর্ষণের মামলার শুনানি স্থগিত করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। অর্থাৎ তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান বেঞ্চ এই মামলায় রায় দিতে পারবে না। কারণ আগামী ১০ নভেম্বর অবসর নিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। আগামীতে দায়িত্বে আসছেন যিনি, সেই বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এই মামলা হাতে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় ফেলার বিরোধী।
কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে আদালতে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, মহারাষ্ট্র সরকারের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী এবং আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ। তাঁরাও আরও একদিন সময় চান আদালতের কাছে। এতে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সওয়াল-জবাব শেষ না হলে, তাঁর অবসরের আগে এ নিয়ে রায় ঘোষণা দুষ্কর। আগামী সপ্তাহে আবার দীপাবলির ছুটে পড়ে যাচ্ছে। তাই অসম্ভাব্যতার কথা জানিয়েই শুনানি স্থগিত করা হয়। পরবর্তী যে বেঞ্চ শুনানি করবে, আবারও প্রথম থেকে সবকিছু হবে। (CJI DY Chandrachud)
আইনজীবী করুণা নন্দী যদিও আজ শুনানির পক্ষে ছিলেন। সকলের সহযোগিতা মিললে তা সম্ভব বলেও জানান তিনি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, নিজ নিজ পক্ষ তুলে ধরার ক্ষেত্রে কাউকে বাধা দিতে পারে না আদালত। সলিসিটর জেনালের মেহতা জানান, কেন্দ্রীয় সরকার বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় ফেলার পক্ষে নয়। তাই বলে যৌনতায় সম্মতির প্রয়োজন উঠে যাচ্ছে না। আইনজীবী নন্দী বলেন, "দেশের লক্ষ লক্ষ নারীর জীবনের প্রশ্ন। অবশ্যই দ্রুত শুনানি প্রয়োজন। আপনার (প্রধান বিচারপতি) উত্তরাধিকারিরের প্রশ্নও জড়িয়ে এই রায়ের সঙ্গে।" পাল্টা সলিসিটর জেনারেল মেহতা বলেন, "বিচারপতির উত্তরাধিকার চিরকাল বজায় থাকবে। এসব বলে বিষয়টিকে হাস্যকর না করে তোলাই উচিত।"
বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় ফেলার বিরোধিতা করে সম্প্রতি আদালতে হলফনামা জমা দেয় কেন্দ্র। তাদের যুক্তি ছিল, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের আওতায় আনার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ এক্ষেত্রে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা আগে থেকেই মজুত রয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্র সরকার আরও জানায় যে, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ ঘোষণা করার এক্তিয়ার নেই আদালতের।
আদালতে কেন্দ্র জানায়, ভারতের মতো দেশে বিয়েকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরা হয়। পারস্পরিক বাধ্যবাধকতা জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। সাতপাকে ঘুরে যে অঙ্গীকার করেন স্বামী-স্ত্রী, তা কোনও ভাবেই লঙ্ঘন করা যায় না। বৈবাহিক সম্পর্কে মহিলাদের সম্মতির বিধিবদ্ধ ভাবে সংরক্ষিত। কিন্তু শাস্তিমূলক বিধানের আওতায় আনার প্রশ্ন একেবারে আলাদা।
কেন্দ্র আরও জানায়, বৈবাহিক সম্পর্কে সঙ্গীর কাছ থেকে যৌন সম্পর্ক নিয়ে কিছু প্রত্যাশা থাকে। তাই বলে ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে জোর করতে পারেন না স্বামী। কিন্তু ধর্ষণ আইনে শাস্তি দেওয়া কিছুটা বাড়াবাড়ি এবং সামঞ্জস্যহীন। বিবাহিত মহিলাদের উপর নিষ্ঠুর আচরণ বন্ধ করতে, গার্হস্থ্য হিংসা রুখতে আইন রয়েছে, যা যথেষ্ট সহায়ক বলে মত কেন্দ্রের।