নয়াদিল্লি: নির্বাচনী রাজনীতিতে হাতেখড়ি হল প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার। নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল আগেই। সেই মতো কেরলের ওয়েনাডে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন তিনি। আসন্ন লোকসভা উপ নির্বাচনে ওয়েনাড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রিয়ঙ্কা। ২০১৯ সাল থেকে ওই আসনটি ছিল প্রিয়ঙ্কার দাদা রাহুল গাঁধীর দখলে। এবার সেখানে প্রার্থী হচ্ছেন প্রিয়ঙ্কা। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দিলেন তিনি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে ওয়েনাডে পথসভাও করেন প্রিয়ঙ্কা। সেখানে তাঁকে দেখতে ভিড় উপচে পড়ে। এদিন নিজের জন্য প্রথম নির্বাচনী বক্তৃতাও করেন। (Priyanka Gandhi Vadra)
বুধবার মা সনিয়া গাঁধী, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, দাদা রাহুল, দলের নেতা কেসি বেণুগোপাল, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া, ডিকে শিবকুমারের সঙ্গে ওয়েনাড রওনা দেন প্রিয়ঙ্কা। পথসভার পর বক্তৃতা করেন, তার পর মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। এর পর রাহুল গাঁধীর সঙ্গে একসঙ্গে পথসভাও করেন তিনি। নির্বাচনী রাজনীতিতে অভিষেকপর্বে সেখানে বক্তৃতাও করেন তিনি। বলেন, "১৯৮৯ সালে ১৭ বছর বয়সে প্রথম বাবার জন্য প্রচারে গিয়েছিলাম। গত ৩৫ বছরে কখনও মা, কখনও দাদা, কখনও সহকর্মীদের হয়ে প্রচারে গিয়েছি। এই প্রথম নিজের জন্য প্রচার করছি। গোটা দুনিয়া যখন আমার দাদার থেকে মুখ ফিরিছিল, আপনারা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আপনারা ওঁকে শক্তি ও সাহস জোগান, লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহ জোগান। আমার গোটা পরিবার আপনাদের কাছে ঋণী থাকবে চিরকাল। যদি সুযোগ দেন, আপনাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের। " (Wayanad Constituency)
প্রিয়ঙ্কার হয়ে আজ প্রথম সভা করেন রাহুলও। তিনি বলেন, "বাবা মারা যাওয়ার পর বোনই মায়ের দেখভাল করেছে। বোনের ১৭ বছর বয়স ছিল যখন বাবা মারা যান। কিন্তু ওই কঠিন সময়ে প্রিয়ঙ্কা শক্তহাতে রাশ ধরেছিল। পরিবারের জন্য সবকিছু বিসর্জন দিতে পারে ও। আপনাদের এতকিছু বলছি কারণ, ওয়েনাডের মানুষকে নিজের পরিবার মনে করে প্রিয়ঙ্কা। নিজের হাতে রাখি তৈরি করে পরায় প্রিয়ঙ্কা। না ছেঁড়া পর্যন্ত খুলি না আমি। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমার বোনকে দেখবেন দয়া করে। আমি জানি, ওয়েনাডের মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবে ও। মনে রাখবেন, আমিও আপনাদের প্রতিনিধি। আমিও এখানে আসব, আপনাদের হয়ে কাজ করব।"
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম বার ওয়েনাডে প্রার্থী হন রাহুল। সে বছর অমেঠীতে পরাজিত হলে, ওয়েনাড তাঁর মুখরক্ষা করে। এ বছর লোকসভা নির্বাচনে ওয়েনাড এবং মা সনিয়া গাঁধীর ছেড়ে যাওয়া রায়বরেলী, দুই কেন্দ্রেই প্রার্থী হন রাহুল। দুই কেন্দ্রেই জয়ী হন তিনি। শেষ পর্যন্ত রায়বরেলী আসনটি ধরে রেখে ওয়েনাড ছেড়ে দেন। রাহুল যদিও গোড়াতেই জানিয়েছিলেন, আসনটি ছাড়লেও, ওয়েনাড ছাড়ছেন না তিনি। আজীবন ওয়েনাডের মাটির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। সেই মতোই ওয়েনাডে প্রিয়ঙ্কাকে প্রার্থী করে চমকে দেন সকলকে।
আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও, জীবনের অধিকাংশ সময় সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। দলের হয়ে প্রচারে অংশ নিলেও, নিজে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে কখনও প্রকাশ করতে দেখা যায়নি তাঁকে। এমনকি উত্তরপ্রদেশে দলের দায়িত্ব যখন কাঁধে পান, সেই সময়ও নিজেকে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখেন তিনি। কিন্তু এবছর লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই তাঁকে প্রার্থী করার দাবি জোরাল হতে থাকে। নির্বাচনের পর ওয়েনাডে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এলে রাহুলের সঙ্গে সেখানে ছুটে যান প্রিয়ঙ্কাও। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরীক্ষণ, সবেতে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেই থেকেই উপ নির্বাচনে ওয়েনাডের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রিয়ঙ্কার নাম উঠে আসতে শুরু করে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সেই লড়াইয়ে অংশ নিলেন প্রিয়ঙ্কা। আগামী ১৩ নভেম্বর নির্বাচন ওয়েনাডে। ফলঘোষণা ২৩ নভেম্বর।