নয়াদিল্লি: দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে উত্তেজনা দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিজেপি-র ছাত্রসংগঠন ABVP-র সঙ্গে সংঘর্ষ বাধল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির। মূলত রাবণ দহনকে ঘিরে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায় সেখানে। হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে। স্লোগানের পাল্টা স্লোগান ওঠে। বামপন্থী ছাত্রদের অভিযোগ, রাবণ দহনের নামে উমর খালিদ, শার্জিল ইমাম, মাও জেদংয়ের কুশপুতুল পোড়ায় ABVP. (JNU News)

Continues below advertisement

ঘটনাস্থল থেকে যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, দশেরায় যেভাবে ১০ মাথার রাবণের কুশপুতুল পোড়ানো হয়, তেমনই একটি কুশপুতুল তৈরি করা হয়েছে। মূল মাথাটি রাবণের হলেও, অন্য মাথাগুলির কোনওটি উমর খালিদ, কোনওটি শার্জিল ইমাম, কোনওটি আফজল গুরু, কোনওটি আবার প্রজাতান্ত্রিক চিনের প্রতিষ্ঠাতা মাও জেদং, কোনওটি তেভাগা আন্দোলনের সংগঠন চারু মজুমদার, কোনওটি আবার নকশাল আন্দোলনের নেতা কানু সান্যালের। কুশপুতুলের  গায়ে লেখা রয়েছে, ‘নকশালবাদ, বামপন্থা, মাওবাদী হিংসা, দেশবিরোধী আদর্শ’। একটি মাথার উপর লেখা ছিল 'শহুরে নকশাল'। (JNU Clash)

২০২০ সালের দিল্লি হিংসা মামলায় এই মুহূর্তে অভিযুক্ত হিসেবে জেলবন্দি উমর এবং শার্জিল। তাঁরা JNU-এরই প্রাক্তন ছাত্র। বিনা বিচারে গত কয়েক বছর ধরে বন্দি তাঁরা। সংসদভবন হামাল মামলায় ফাঁসি হয়েছিল আফজল গুরুর। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি, ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে ABVP, অশান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। পাল্টা ABVP-র দাবি, তাদের দুর্গা বিসর্জন শোভাযাত্রায় হামলা চালান বামপন্থী ছাত্ররা। স্লোগান দেওয়া হয়, ছোড়া হয় জুতো। 

Continues below advertisement

ঘটনাস্থল থেকে একটি সামনে এসেছে, যেখানে নিরাপত্তারক্ষীদের মানববন্ধন করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। দু’পক্ষকেই নিরস্ত করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। ABVP নেতা ময়ঙ্ক পাঞ্চাল বলেন, “JNU-এর পরিবেশ বরাবর বৈচিত্র ও উৎসবমুখর। গত ১০ দিন ধরে পড়ুয়ারা মা দুর্গার আরাধনা করছিলেন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংসকৃতিক সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। কিন্তু বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি এই পবিত্র আয়োজনে হিংসা ও ঘৃণা সংযোগ করে, তাকে কলঙ্কিত করেছে। এটা শুধু ধর্মীয় আয়োজনের উপর হামলা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসবমুখর সংস্কৃতি, পড়ুয়াদের আস্থার উপর সরাসরি হামলা।”

অন্য দিকে, JNU-এর ছাত্র পরিষদের যুগ্ম সচিব তথা ABVP-র সদস্য বৈভব মীনা বলেন, “আজ বামপন্থী ছাত্ররা শোভাযাত্রায় যে হিংসা চালিয়েছে, পাথর ছুড়েছে, তা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, ওরা ভারতীয় সংস্কৃতি, হিন্দু পরম্পরাকে ঘৃণা করে। এটা শুধু ছাত্রদের উপর হামলা নয়, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সাংস্কৃতি সৌহার্দ্য ও সৌভ্রাতৃত্বের উপর হামলা। যারা নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করে, তারাই ভারতের উৎসব, মূল্যবোধকে সবচেয়ে বেশি অসম্মান করে। প্রশাসনকে বলব, দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।”

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি যদিও ABVP-র অভিযোগ খারিজ করেছে। রাবণরূপে যে কুশপুতুল তৈরি করা হয়, তাতে মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে বা স্বঘোষিত ধর্মগুরু, অপরাধ মামলায় দোষী সাব্যস্ত গুরমীত রাম রহিমের ছবি লাগানো হল না কেন, প্রশ্ন তুলেছে তারা। ABVP বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘৃণার রাজনীতি করছে, ইসলামভীতি ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। AISA জানিয়েছে, আজ পর্যন্ত উমর এবং শার্জিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। তা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃত ভাবে, ঘৃণা ছড়াতেই তাঁদের ছবি পোড়ানো হয়। JNU কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি বিষয়টি নিয়ে।