নয়াদিল্লি: দেশের নানা রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে রেলমন্ত্রক যে বিশেষ ট্রেন পরিষেবা চালু করেছে, তার ভাড়া শ্রমিকদের থেকেই আদায় করতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। এর নিন্দা করে কংগ্রেস পরিযায়ী শ্রমিকদের রেল ভাড়া মিটিয়ে দেবে বলে ঘোষণা করলেন দলের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। কংগ্রেস বারবার ওই শ্রমিকদের সাহায্য করার দাবি করলেও কেন্দ্র ও রেলমন্ত্রক তা পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, জাতীয় কংগ্রেস ঠিক করেছে, প্রতিটি দুঃস্থ ও পরিযায়ী শ্রমিকের রেলযাত্রার ভাড়া বহন করবে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিগুলি, সেইমতো পদক্ষেপ করবে। সনিয়া বলেন, ওঁরাই আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, আমাদের দেশের উন্নয়নের দূত। এটা আমাদের সামান্য অবদান।
সনিয়া বলেছেন, যখন আমাদের সরকার বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের বিনা পয়সায় বিমানে ফেরানোর আয়োজন করে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে, গুজরাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরে একটামাত্র সরকারি কর্মসূচির জন্য পরিবহণ, খাবারদাবারের পিছনে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঢালতে পারে, যদি রেলমন্ত্রকের হাতে প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলে দান করার জন্য ১৫১ কোটি থাকে, তাহলে একই সুবিধা কেন দেওয়া যায় না আমাদের দেশের মৌলিক কাঠামোর অতিপ্রয়োজনীয় মানুষগুলিকে, বিশেষ করে এই চরম দুঃসময়ে ওদের নিখরচায় ট্রেনে ঘরে ফিরিয়ে?
কেন্দ্র মাত্র ৪ ঘন্টার নোটিশে লকডাউন চালু করায় পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে সনিয়া বলেন, ১৯৪৭ এর দেশবিভাজনের পর ভারতে এমন মাপের এটাই প্রথম ট্র্যাজেডি, যার চরম মূল্য দিচ্ছেন মানুষ, যানবাহনের অভাবে হাজারে হাজারে ভিন রাজ্যে যাওয়া শ্রমিক শয়ে শয়ে কিলোমিটার হাঁটছেন ঘরের দিকে, সঙ্গে খাবার, জল, ওষুধ, টাকাপয়সা কিছুই নেই, পরিবার, প্রিয়জনেদের কাছে ফেরার তীব্র বাসনাটুকু ছাড়া কিছুই নেই ওঁদের। এমনকী আজও লাখ লাখ কর্মী, শ্রমিক দেশের নানা প্রান্তে দুর্ভোগে কাটাচ্ছেন, ঘরি ফিরতে চাইছেন, কিন্তু হাতে টাকাপয়সা বা নিখরচায় ফেরার ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হল, এই সঙ্কটের সময় ওদের কাছ থেকে ট্রেনের ভাড়া আদায় করছে রেলমন্ত্রক, কেন্দ্র।
যদিও কংগ্রেসের ঘোষণার পাল্টা সরকারি সূত্রের কটাক্ষ, এটা স্রেফ কথার কথা, শো! সূত্রটির দাবি, সরকার ৮৫ শতাংশ ভাড়া ভরতুকি দিচ্ছে। বাকি ভাড়া রাজ্যগুলির বহন করার কথা। কেন্দ্র সামাজিক দূরত্ব, ডাক্তার, রেলকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ট্রেনগুলি অর্ধেক খালি রেখে চালাচ্ছে। তার খরচও দিচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের মতো কিছু রাজ্য মোট খরচের ১৫ শতাংশ, যা টিকিটের দাম, দিচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ৪০ দিনের থাকা, খাওয়ার খরচ রাজ্যগুলি দিচ্ছে। ট্রেনের ভাড়াও তারা দিলেই ভাল হত। কিন্তু তারা এগিয়ে আসছে না।
গত শুক্রবার থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ নিজ রাজ্যে ফিরতে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছে। রেলমন্ত্রকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন তাদের অনুমোদিত যাত্রীদের হাতে টিকিট দেবে, টিকিটের ভাড়া তাদের কাছ থেকে আদায় করে পুরো টাকাটা রেলকে দেবে। এর তীব্র নিন্দা করে বিরোধীরা কেন্দ্রকেই পুরো ট্রেনভাড়া বহনের দাবি করেছে।

C