নয়াদিল্লি: ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে তাঁর মন্তব্যে বিতর্কের ঝড়। কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। বরং জানিয়ে দিলেন, কিছু ভুল বলেননি তিনি। তাই কোনও ভাবেই ক্ষমা চাইবেন না। ‘অপারেশন সিঁদুরে’ প্রথম দিনই ভারত পরাজিত হয় বলে দাবি পৃথ্বীরাজের। (Prithviraj Chavan remarks on OP Sindoor)

Continues below advertisement

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পরই পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারত। সেখানে জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের তরফে পাল্টা আঘাত এলে, তারও মোকাবিলা করে সেনা। শেষ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ( Operation Sindoor)

আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে কেন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করতে হল, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে গোড়া থেকেই। সংঘাত চলাকালীন ভারতের কয়টি যুদ্ধবিমানের ক্ষতি হয়, সেই নিয়েও নানা দাবিদাওয়া সামনে এসেছে। সেই বিতর্কের আগুনে সম্প্রতি ঘি ঢালেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ। 

Continues below advertisement

সম্প্রতি পুণেতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মন্তব্য করেন পৃথ্বীরাজ। তিনি বলেন, “(অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন) প্রথম দিনই আমরা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হই। ৭ মে আধঘণ্টার জন্য আকাশে যখন মুখোমুখি হই, সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হই আমরা। কেউ মানতে চান, বা না চান, ভারতের যুদ্ধবিমান নামানো হয়। বায়ুসেনা সম্পূর্ণরূপে বসে যায়। একটি বিমানও ওড়েনি। গ্বালিয়র, ভাটিন্ডা অথবা সিরসা থেকে কোনও বিমান উড়লেই পাকিস্তান গুলি করে নামিয়ে দিত। তাই বায়ুসেনাকে সম্পূর্ণরূপে বসিয়ে দেওয়া হয়।”

শুধু তাই নয়, ১২ লক্ষ সেনাকে নিয়ে ভারত কী করছে, সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পৃথ্বীরাজ। তিনি বলেন, “সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুরের সময় দেখলাম, সেনা এক কিলোমিটারও নড়াচড়া করল না। দু’-তিনদিনে যা ঘটে, তা আসলে আকাশপথের যুদ্ধ, ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ।  ভবিষ্যতেও একই ভাবে যুদ্ধ হবে। এমন পরিস্থিতিতে ১২ লক্ষ সেনা রাখার কি আদৌ প্রয়োজন রয়েছে? ওঁদের কি অন্য কাজে লাগাতে পারি আমরা?”

পৃথ্বীরাজের এই মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। বিজেপি-র মুখপাত্র শেহজাদ পুণাওয়ালা সরাসরি রাহুল গাঁধীকেই আক্রমণ করেন। বলেন, “সেনাকে অপমান করা কংগ্রেসের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটা শুধুমাত্র পৃথ্বীরাজের মন্তব্য নয়। রাহুল গাঁধীও এই ধরনের মন্তব্যই করেছেন। এতে গাঁধীদের মানসিকতাই প্রতিফলিত হয়েছে। যে কারণে এই ধরনের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না। ওদের সেনাবিরোধী মানসিকতা বোঝাই যাচ্ছে।”

কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহও আক্রমণ শানাতে দেরি করেননি। তাঁর বক্তব্য, “সেনার সাহসিকতাকে অপমান করার অধিকার নেই কারও। যারা এসব করে, তারা দেশের স্বার্থের কথা ভাবে না। সেনাকে অপমান করা কংগ্রেসের অভ্যাস।  বিজেপি-র রাজ্যসভার সাংসদ তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন শীর্ষ পুলিশকর্তা ব্রিজলাল বলেন, “কংগ্রেস বরাবর পাকিস্তানপন্থী, দেশকে অপমান করে। বিদেশে গিয়ে ভারতকে অপমান করেন রাহুল গাঁধীও। গোটা দেশ দেখছে। মানুষ ওদের শিক্ষা দেবেন।”

পৃথ্বীরাজের ওই মন্তব্য থেকে কংগ্রেস যদিও দূরত্বই বজায় রেখেছে। দলের লোকসভার সাংসদ সুখদেও ভগৎ বলেন, “কোন সূত্র থেকে এমনটা জেনেছেন, তা পৃথ্বীরাজই বলতে পারবেন। আমার সেনাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। সন্ত্রাস এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেস সরকারকেই সমর্থন করে।” কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি সেনার ভূয়সী প্রশংসা করলেও, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করেন। 

তবে বিতর্কে সত্ত্বেও নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ পৃথ্বীরাজ। তাঁর বক্তব্য, “আমি ক্ষমা চাইব না। কিছু ভুল বলিনি, যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবেষ এখন আর এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু আমি ক্ষমা চাইব না। প্রয়োজনই নেই। অন্যায় কিছু বলিনি আমি।” তাই বিষয়টি এখনই থিতিয়ে যাবে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পৃথ্বীরাজের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিজেপি কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।