নয়াদিল্লি: প্রায় দু'দশক ধরে নিরাপদ আশ্রয় ছিল। সেই বাংলোই ছাড়লেন কংগ্রেস (Congress) নেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। মোদি-পদবী মন্তব্যে বিতর্কে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন রাহুল। তার পরই সাংসদ পদ খারিজ হয় তাঁর। সেই সঙ্গে বাংলো ছেড়ে দেওয়ার নোটিস ধরানো হয়। আইনি জটিলতা এখনও চলছে যদিও। তার মধ্যেই বাংলো ছেড়ে দিলেন রাহুল। শনিবার বাংলো ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
গত কয়েক দিন ধরেই বাংলো ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাহুল
২০০৫ সালে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দিল্লির ১২ নম্বর তুঘলক রোডের ওই সরকারি বাংলোয় থাকছিলেন রাহুল। মোদি-পদবী মন্তব্য়ে দোষী সাব্যস্ত হলে ওই বাংলো ছাড়ার নোটিস ধরানো হয় তাঁকে। সেই মতো গত কয়েক দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাহুল। আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত জিনিস, সব একে একে সরাতে শুরু করেন। জিনিসপত্র নিয়ে বেশ ক'দিন বাংলো থেকে বেরোতেও দেখা যায় পর পর লরি, ট্রাককে।
একমাসের মধ্যে বাংলো ছাড়ার নোটিস ধরানো হয়েছিল রাহুলকে। ২২ এপ্রিলই বাংলো ছাড়তে হবে ববেলে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল নোটিসে।তার পর থেকেই রাহুল কবে বাংলো ছাড়তে চলেছেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। শেষ মেশ শনিবার বাংলো ছাড়লেন রাহুল। এ দিন সকালেও ওই বাংলোয় দু'-দু'বার ঢুকতে দেখা যায় রাহুল, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা এবং রবার্ট বঢরাকে। দুপুর ৩টেয় চাবিও তুলে দেন সরকারি প্রতিনিধির হাতে।
মামলায় দোষী সাব্যস্ত জনপ্রতিনিধিদের পদস্খলনের আইন রয়েছে। তবে রাহুলের ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সাধারণ রাজনৈতিক মন্তব্যকে হাতিয়ার করে তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানি মামলা দায়ের হয় বলে দাবি কংগ্রেসের। এমনকি দোষী সাব্যস্ত হওয়া থেকে সাজা ঘোষণা, সাংসদ পদ খারিজ থেকে বাংলো ছাড়ার নোটিস, গোটা ঘটনাক্রমই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ তাদের।
যদিও বাংলো ছাড়তে কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন রাহুল। তাঁর দাবি, দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে যদি রাস্তায় নামতে হয় তাঁকে, তা হাসিমুখে মেনে নেবেন। তবে রাহুলকে বাংলো খালি করার নোটিস ধরানোর পর থেকেই নেট মাধ্যমে রাহুলের প্রতি ভালবাসা উগরে দেন সাধারণ মানুষ। রাহুলের জন্য নিজের বাড়ি ছেড়ে দিতে পারেন বলে প্রস্তাবও আসে। তবে তার কোনওটিই আপাতত গ্রহণ করছেন না রাহুল। বরং ১০ নম্বর জনপথে মা সনিয়া গান্ধীর সাংসদ বাংলোয় আপাতত উঠে যাচ্ছেন তিনি।
মানহানি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন রাহুল
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি-কে আক্রমণ করতে গিয়ে নীরব মোদি, ললিত মোদি এবং নরেন্দ্র মোদিকে এক আসনে বসিয়ে আক্রমণ করেছিলেন রাহুল। তার প্রেক্ষিতেই তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মানহানির মামলা দায়ের করেন গুজরাতের এক বিজেপি নেতা। এ বছর সেই মামলাতেই গুজরাতের সুরত আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করে। সাজা শোনায় দু'বছরের। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেনজির ভাবে রাহুলের সাংসদপদ খারিজ হয়। যদিও রাহুলের দাবি, সংসদে গৌতম আদানিকে প্রদত্ত বাড়তি সুবিধা, তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শিল্পপতির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলেই পরিকল্পনা করে তাঁকে লোকসভআ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। এখনও বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই চলছে।