নয়াদিল্লি: জল্পনা সত্যি করে এবার রাজ্যসভার আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিলেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী। রাজস্থানের জয়পুর থেকে রাজ্যসভার প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন তিনি। বুধবার জয়পুরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সনিয়া। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা এবং ছেলে রাহুল গাঁধী। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও। (Sonia Gandhi)
রাজস্থান থেকে সনিয়ার রাজ্যসভার প্রার্থী হওয়া নিয়ে রাজ্যের বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা অশোক গহলৌত আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "রাজ্যসভার সদস্য হতে যে কোনও রাজ্যকেই বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু সনিয়া গাঁধা রাজস্থানকেই বেছেছেন। গোটা দেশ তো বটেই, দেশের বাইরেও এখন রাজস্থানকে নিয়ে আলোচনা। এত অভিজ্ঞ একজন রাজস্থান থেকে মনোনয়ন দিচ্ছেন। বুঝতেই পারছেন আমরা কতটা গর্ববোধ করছি।" (Rajya Sabha Elections 2024)
বিবাহসূত্রে ভারতের রাজনীতির সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে ওঠে সনিয়ার। ১৯৯১ সালে রাজীব গাঁধীর মৃত্যুর পর পরই তাঁকে কংগ্রেস সভানেত্রী এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সময় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন সনিয়া। কিন্তু ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর সঙ্কট নেমে আসে। মাধবরাও সিন্ধিয়া, রাজেশ পায়লট, নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পি চিদম্বরমের মতো নেতারা দলের তৎকালীন সভাপতি সীতারাম কেশরীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন অনেকে।
সেই সময় আবারও গাঁধী পরিবারের সদস্যা সনিয়ার দ্বারস্থ হন কংগ্রেসের তদানীন্তন নেতৃত্ব। এর পর ১৯৯৭ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনে অংশ নেন সনিয়া। ১৯৯৮ সালে দলের দায়িত্ব হাতে পান। তার পরও দলের অন্দরে এবং বাইরে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে পড়তে হয়েছে সনিয়াকে। ১৯৯৯ সালেই প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সনিয়া। প্রথম বার অমেঠী থেকে প্রার্থী হলেও, গাঁধী পরিবারের গড় বলে পরিচিত রায়বরেলী থেকেই দীর্ঘসময় প্রার্থী হয়ে আসছিলেন তিনি। একসময় ফিরোজ গাঁধী এবং ইন্দিরা গাঁধীর কেন্দ্র ছিল রায়বরেলী। ২০০৪ সাল থেকে এতদিন, প্রায় দু'দশক কংগ্রেসের হয়ে রায়বরেলী ধরে রেখেছিলেন সনিয়া।
কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসতে থাকে, ততই সনিয়াকে ঘিরে জল্পনা বাড়তে থাকে। ৭৭ বছর বয়সি এমনিতেই শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যজনিত কারণেই ইদানীং সক্রিয়া রাজনীতিতে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। I.N.D.I.A জোটের বৈঠকে শামিল হলেও, সেখানে নামভূমিকায় ছিলেন না সনিয়া। তাতেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে প্রথমে তেলঙ্গানা থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তাব দেওয়া হয় সনিয়াকে। কিন্তু তার মধ্যেই জানা যায়, নির্বাচনী রাজনীতিতে এবছর অভিষেক ঘটতে পারে প্রিয়ঙ্কার। সেক্ষেত্রে গাঁধী পরিবারের গড় রায়বরেলী থেকে প্রার্থী হতে পারেন তিনি। মেয়েকে রায়বরেলী ছেড়ে দিয়ে রাজ্যসভার দিকে ঝুঁকতে পারেন সনিয়া। সেই জল্পনাতেই সিলমোহর পড়ল বুধবার।