নয়াদিল্লি: ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন বা SIR নিয়ে রাজনীতির পারদ চড়ছেই। সেই আবহে সংসদে দাঁড়িয়েই নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেদিলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ তথা ট্রেজারার অজয় মাকেন। নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘পুতুল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। বিশেষ করে বিজেপি এবং বিরোধী দলগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ফারাক যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন অজয়। (Ajay Maken)
রাজনীতির ময়দানে বিরোধীদের সমানে সমানে লড়াইয়ের সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলেন অজয় এবং তার জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করেন তিনি। গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি, নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রাজ্যসভায় নিজের বক্তৃতায় অজয় জানান, বিজেপি এবং কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক ব্য়ালেন্সে আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে। প্রত্যেক লোকসভা নির্বাচনের পর সেই ফারাক আরও বৃদ্ধি পায়। (BJP vs Congress)
গত ২০ বছরের হিসেব তুলে ধরে অজয় জানান, ২০০৪ সালে বিজেপি-র ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ছিল ৮৭ কোটি ৯৬ লক্ষ। কিন্তু ২০১৪ সাল আসতে আসতে তা ১০ হাজার ১০৭ কোটি ২ লক্ষ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। অথচ ওই একই সময়ে কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ৩৮ কোটি ৪৮ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৩.৯৭ কোটি টাকা। অজয় বলেন, “ব্যবসায়ী থেকে বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সময় রাজনৈতিক দলগুলিকে তাঁরা ৬০:৪০ অনুপাতে চাঁদা দিতেন। বর্তমানে চাঁদার অনুপাত ৯০:১০। তাঁরা বলেন, ‘৯০:১০ ছাড়ুন, ৯৫:৫ অনুপাতেও দিতে পারব না। দিলে ED, আয়কর পিছনে পড়ে যাবে। কিছু করার অনুমতি নেই আমাদের’।”
পরিসংখ্যান পেশ করে অজয় জানান, এই মুহূর্তে বিজেপি-র নির্বাচনী অ্যাকাউন্টে কংগ্রেসের তুলনায় ৭৫ গুণ বেশি টাকা রয়েছে। তাঁর মতে, দেশের দুই অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের সম্পদে এত ফারাক থাকলে, সমানে সমানে খেলা হয় না, যা কি না ‘সুস্থ গণতন্ত্রে’র অন্যতম মাইলফলক, একই ভাবে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাও নির্বাচনী গণতন্ত্রের মাইলফলক।
অজয় জানিয়েছেন, ২০০৪ সালে বিজেপি-র ব্য়াঙ্ক ব্যালেন্স ছিল ৮৭ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। সেইসময় ৩৮ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ছিল কংগ্রেসের। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বেড়ে হয় ২২১ কোটি টাকা, বিজেপি-র হয় ১৫০ কোটি। ২০১৯ সাল আসতে আসতে আকাশ পাতাল ফারাক হয়ে যায়, বিজেপি-র ৩ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা, কংগ্রেসের চেয়ে ১১ গুণ বেশি। ওই সময় কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স ছিল ৩১৫ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে বিজেপি-র ব্য়াঙ্ক ব্যালেন্স ছিল ১০ হাজার ১০৭ কোটি ২ লক্ষ টাকা। ১৩৩ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা ছিল কংগ্রেসের অ্যাকাউন্টে। অর্থাৎ কংগ্রেসের চেয়ে ৭৫ গুণ বেশি টাকা ছিল বিজেপি-র অ্যাকাউন্টে।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন অজয়। এ প্রসঙ্গে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের উল্লেখ টানেন তিনি। নির্বাচনের ঠিক মুখে, আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে যেভাবে মহিলাদের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়, প্রশ্ন তোলেন অজয়। অথচ বিরোধি শাসিত রাজ্যগুলিতে কমিশনের অচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন কেন, জানতে চান। অজয়ের বক্তব্য, “আম্পায়ার নিজে কোনও দলের জার্সি পরলে, অন্য দলটি কী করবে? আম্পায়ার নিজে ম্যাচ ফিক্স করে দিলে, বাকি খেলোয়ারদের কী করার থাকে?” বিজেপি-র সুধাংশু ত্রিবেদী যদিও পাল্টা আক্রমণ করেন কংগ্রেসকে। খামোকা ঝামেলা পাকানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।