নয়াদিল্লি: একই দিনে সাজা ঘোষণা এবং তার পরই জামিন মঞ্জুর। তাও বিপন্মুক্ত নন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। মানহানি মামলায় (অপরাধমূলক) দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় কংগ্রেস সাংসদের রাহুল সাংসদ পদই হারাতে পারেন বলে মত আইন বিশেষজ্ঞদের। ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে অন্তত তেমনই নির্দেশ রয়েছে বলে দাবি তাঁদের (Rahul Gandhi Defamation Case।
আদালত রাহুলকে দু'বছরের সাজা শোনায়
চার বছর আগের মানহানি মামলায় বৃহস্পতিবার গুজরাতের সুরত জেলা আদালতে দোষী সাব্য়স্ত হন রাহুল। আদালত তাঁকে দু'বছরের সাজা শোনায়। পরে যদিও ৩০ দিনের জামিন মঞ্জুর হয় রাহুলের। আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ওই সময়ের মধ্যে আবেদন জানাতে পারেন তিনি। কিন্তু আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়াতেই রাহুলের সাংসদ পদ বাতিল হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮ (৩) নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাতে বলা রয়েছে, যে কোনও অপরাধই হোক না কেন, আদালতে যদি কোনও সাংসদ দোষী সাব্যস্ত হন, সাজার মেয়াদ যদি কমপক্ষে দু'বছর হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদটি বাতিল হয়ে যাবে। তাই রাহুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রমাদ গুনছেন অনেকেই।
যদিও মানহানি মামলায় রাহুলকে দু'বছরের সাজা শোনানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, মানহানি মামলায় (অপরাধমূলক) ৪৯৯ ধারায় রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই ধরনের মামলায় দু'বছরের সাজা অত্য়ন্ত বিরল ঘটনা। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, নিম্ন আদালতের এই রায়কে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবেন রাহুল। সেখানে যদি নিম্ন আদালতের রায় বাতিল না হয়, বা সাজার নির্দেশে স্থগিতাদেশ না আসে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন তিনি।
আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিরোধী শিবিরের একাংশ। তাতে বিজেপি-র তরফেও আক্রমণ করা হয়েছে রাহুলকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের দাবি, রাহুল আসলে মোদি পদবীর অধিকারী গোটা সম্প্রদায়কে অপমান করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “মোদি হল একটি সম্প্রদায়, শুধুমাত্র পদবী নয়। ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী রয়েছেন এই সম্প্রদায়ে। তাই কোনও সম্প্রদায়কে পদবীর জন্য যদি চোর বলা হয়, তাতে অপমান হয় বইকি!রাহুল গান্ধী ববছেন তিনি সত্য এবং অহিংসার পুজারী। তার অর্থ কি জাতপাত নিয়ে অপমান করা?”
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: মোদি পদবী নিয়ে কটাক্ষ, মানহানি মামলায় দোষী, সাময়িক জামিন পেলেন রাহুল
রাহুল যদিও সাফ জানিয়েছেন, কাউকে আঘাত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। রাজনীতিক হিসেবেই এই মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্তও হননি। শুধু তাই নয়, আদালতের রায়ের পর ট্যুইটারে রাহুল মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে লেখেন, 'সত্য এবং অহিংসাই আমার ধর্ম। আর সত্যই আমার কাছে ঈশ্বর। আর অহিংসা হল ঈশ্বরকে পাওয়ার সাধনা'।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাফাল দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল। সেই সময় কর্নাটকের কোলারে প্রচারে গিয়ে বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। নীরব মোদি থেকে ললিত মোদি, কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়েও মন্তব্য করেন। সেখানে কটাক্ষের সুরে রাহুলকে বলতে শোনা যায়, "কাকতালীয় ভাবে সব চোরেদের পদবী মোদি হয় কী করে?"
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় করা মন্তব্যে বিতর্ক
রাহুলের এই মন্তব্যেই বিতর্ক বাধে। দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাহুল আসলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন বলে দাবি করে বিজেপি। তাতে রাহুলের বিরুদ্ধে (অপরাধমূলক) মানহানির মামলা করেন গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেন্দু মোদি।পূর্ণেন্দুর অভিযোগ ছিল, গোটা মোদি সম্প্রদায়কে অপমান করেছেন রাহুল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়।