নয়াদিল্লি: মণিপুর হিংসা নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে মঙ্গলবার আলোচনা শুরু সংসদে (No Confidence Motion)। দুপুর ১২টা থেকে লোকসভায় শুরু হবে আলোচনা। বিরোধীদের তরফে আলোচনার সূচনা করবেন অতি সম্প্রতি সাংসদপদ ফিরে পাওয়া রাহুল গাঁধী। বক্তৃতা করবেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও। সরকারের তরফে থাকবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সব শেষে আগামী ১০ অগাস্ট জবাবি ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (Manipur Violence)


অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আগে, মঙ্গলবার সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছে বিজেপি। সংসদে সরকারের তরফে বক্তার তালিকায় রয়েছে নির্মলা সীতারামন, স্মৃতি ইরানি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং কিরেজ রিজিজুর নামও। এর পাশাপাশি আরও পাঁচ জন বিজেপি সাংসদ তর্ক-বিতর্কে অংশ নেবেন। তবে সকলের নজর রাহুলের দিকে। মোদি-পদবী মামলায় সাংসদ পদ বাতিল হয় তাঁর। তার পর দীর্ঘ সাড়ে চার মাস সংসদের বাইরে ছিলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত সংসদে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে তাঁর। জুন মাসে মণিপুরও ঘুরে এসেছেন রাহুল। তাই তিনি কী বলেন, সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।


গত ২০ জুলাই সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু মণিপুর হিংসা নিয়ে বার বার অধিবেশন মুলতবি করতে হয়েছে। বিরোধীদের তরফে বার বার প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করা হলেও, সরকারের তরফে সদর্থক বার্তা দেওয়া হয়নি। তাতেই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন বিরোধীরা। সংখ্যার সমীকরণে তাতে জয়ের সম্ভাবনা নেই যদিও বিরোধীদের। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, সরকার ফেলা লক্ষ্য নয় তাঁদের, মণিপুর নিয়ে প্রধীনমন্ত্রীর নীরবতা ভাঙাই লক্ষ্য। তাঁকে মুখ খুলতে বাধ্য করতেই এই অনাস্থা প্রস্তাব।


আরও পড়ুন: Manmohan Singh: হুইল চেয়ারে বসেই রাজ্যসভায় মনমোহন, শ্লেষ দাগল বিজেপি, ‘প্রভুকে বলুন দেখে শিখতে’, পাল্টা কংগ্রেস


মণিপুর হিংসায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭০ জনের প্রাণ গিয়েছে। ঘরছাড়া ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। সেই নিয়ে আগাগোড়া সংসদে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিরোধীরা। এর পাল্টা সরকারের তরফে ১৯৯৩ এবং ১৯৯৭ সালের হিংসার ঘটনা টেনে আনা হয়েছে। তাদের দাবি, ওই সময়ও হিংসা ছড়ায় মণিপুরে। কিন্তু তৎকালীন সরকার সেই সময় কোনও বিবৃতি জারি করেনি। আগে যখন হয়নি, এখনও প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে জোর করা যায় না বলে দাবি তাদের। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের প্রধান প্রধানমন্ত্রী। দেশে এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে সংসদে জবাবদিহি করতে বাধ্য তিনি। মণিপুরের যা অবস্থা এই মুহূর্তে, তাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্য কিছু বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না বলেও মত তাঁদের।


এর আগে, সোমবার বিরোধীদের নিশানা করেন শাহ। দিল্লি সার্ভিস বিল নিয়ে ভোটাভুটির সময় তিনি বলেন, "মণিপুর নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ করছে, তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখন ভোটাভুটি করার সময় নয়। ভোট যদি করতেই হয়, আমি চ্যালেঞ্জ করছি, দিল্লি সার্ভিস বিল নিয়ে ভোটাভুটি করুন।" দিল্লিতে আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে ওই বিলে। সেটি গতকাল পাসও হয়ে গিয়েছে রাজ্যসভায়। তবে যতটা ব্যবধান থাকবে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটাও হয়নি। ১৩১ বনাম ১০২ ভোটে পাস হয় বিলটি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, বর্ষীয়াণ রাজনীতিক শিবু সোরেনও মধ্য়রাতের ওই ভোটাভুটিতে অংশ নেন। 


এর আগে, ২০১৮ সালেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়। সেবার ৩২৫ জন সাংসদের সমর্থন পেয়েছিল মোদি সরকার। বিরোধীদের তরফে ভোট পড়ে ১২৬টি। বর্তমানে লোকসভার মোট ৫৭০টি আসনের নিরিখে ম্যাজিক সংখ্যা ২৭০। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোটি ৩৩২ জনের সমর্থন পাওয়ার আশা করছে। ওড়িশার বিজু জনতা দল এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস তাদের সমর্থন করছে। সবমিলিয়ে ৩৬৬ জনের সমর্থন মিলবে বলে আশা করছে কেন্দ্র। বিরোধী শিবির INDIA-র আসনসংখ্যা সেই নিরিখে ১৪২।