নয়াদিল্লি: শুধু শেয়ার বাজারে কারচুপি বা হাওয়ালা মাধ্যমে টাকা পাচার নয়, আদানি গোষ্ঠীর (Adani Group) বিরুদ্ধে কয়লা নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়ে আবারও কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী (Rahul Gandhi)। আদানির বিরুদ্ধে ওঠা ভূরি ভূরি অভিযোগ, যে কোনও দেশের সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বলেও মন্তব্য করেন রাহুল।
শেয়ারে কারচুপি থেকে সিমেন্ট চুক্তি, শিল্পপতি গৌতম আদানি (Gautam Adani) এবং তাঁর সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গত কয়েক মাসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এসেছে। তাতে নয়া সংযোজন কয়লা দুর্নীতি। লন্ডনের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ থেকে নামমাত্র দামে কয়লা কিনলেও, বিলে কারচুপি করে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ বেশি মূল্য দেখিয়েছে আদানিরা। আর সেই দাম উসুল করতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের থেকে বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে, যা আসলে ঘুরপথে বিদ্যুতের দাম বাবদ সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে ওই রিপোর্টই তুলে ধরেন রাহুল। তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়ায় কয়লা কেনেন গৌতম আদানি। ভারতে পৌঁছতে পৌঁছতে তার দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। দেশের দরিদ্র মানুষের পকেট থেকে নিজের সিন্দুকে ৩২ হাজার কোটি টাকা পুরেছেন আদানি।”
আরও পড়ুন: Narendra Modi: ‘যে বা যারা যুক্ত’...গাজায় হাসপাতালে হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া মোদির
ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান মূল্যের জন্য আদানিকেই সরাসরি দায়ী করেছেন রাহুল। তাঁর মতে, ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যনও আদানিদের কয়লার দামের রহস্যজনক বৃদ্ধি নিয়ে খবর করেছে। কিন্তু ভারতে সেই নিয়ে কোনও আলোচনাই হয় না। রাহুলের কথায়, “উনি দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের থেকে টাকা হাতিয়েছেন। যে কোনও দেশের সরকার পড়ে যাওয়ার জন্য এইটুকই যথেষ্ট। কারণ এখানে সরাসরি চুরি করা হয়েছে।”
এর আগে, দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে আদানির বিরুদ্ধে সরব হন রাহুল। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকে এখনও পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি, আদানিকে বাড়তি সুবিধা, বরাত দিয়ে আসছেন এবং তাঁর যাবতীয় অপরাধ ঢাকা দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ তোলেন রাহুল। এদিনও সরাসরি মোদিকে নিশানা করেন রাহুল। বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদি আবারও আদানিকে রক্ষা করছেন। আমি বুঝি না, কেন এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনও কথা বলেন না।”
কেন আদানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না সরকার, আজ ফের প্রশ্ন তোলেন রাহুল। যদিও বরাবর সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে আদানিরা। তাদের দাবি, পুরনো কাসুন্দি টেনে এনে তাদের বদনাম করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে কিছু মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বলেও দাবি করে তারা। কিন্তু আদানিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলে আসছেন বিরোধীরা। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও সংসদে সে নিয়ে সরব হন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। অভিযোগ করেন, অন্য সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া টাকা এবং ঘুষের বিরুদ্ধে মহুয়া আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। যদিও মহুয়ার দাবি, আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করাতেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে। একই ভাবে, পুরনো মানহানি মামলায় রাহুলের সাংসদ পদ বাতিল হয়ে যাওয়ার সময়ও কংগ্রেসের তরফে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল।