নয়াদিল্লি: দেশের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য অত্যাধুনিক ও উচ্চ-সুরক্ষিত ভিভিআইপি বাহন 'এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান' ভারতে আনতে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিল এক প্রতিনিধিদল। ওই দলে রয়েছেন ভারতীয় বায়ুসেনা, এয়ার ইন্ডিয়া, নিরাপত্তা বাহিনী ও কেন্দ্রের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।


কেন্দ্রের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক জানিয়েছেন, ভারতীয় বায়ুসেনা, এয়ার ইন্ডিয়া, ভিভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও কেন্দ্রের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল ওই বিমান গ্রহণ করতে গিয়েছেন।


এই বিশেষ ভিভিআইপি বিমানগুলি তৈরি করেছে মার্কিন সংস্থা বোয়িং। দুটি "বোয়িং ৭৭৭-ইআর" মডেলের বিমানের একটি অগাস্টে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বিমানগুলি বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর জন্য তৈরি করা হয়েছে।


জানা গিয়েছে, বিমানের যাবতীয় পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। ভেতরের সজ্জার কাজও শেষ। ইতিমধ্যেই, একটি এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান(এআই ওয়ান) বিমানকে ছাড়পত্র দিয়েছে মার্কিন সংস্থা ফেডেরাল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। এর অর্থ, বিমানটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।


কেন্দ্রীয় সূত্রের দাবি, বিমানটি ভারতে পৌঁছনো মাত্রই তা অপারেশনাল হয়ে যাবে। অর্থাৎ, তাকে কাজে লাগানো হবে। মোট দুটি বিমানের বরাত দেওয়া হয়েছিল। প্রথমটি কয়েকদিনের মধ্যেই হস্তান্তর হতে চলেছে। এর জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন আধিকারিকরা।


এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান বিমানে রয়েছে অত্যাধুনিক ও সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে মাঝ-আকাশ থেকেও নিরবিচ্ছিন্ন অডিও ও ভিডিও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব। পাশাপাশি, এই বিমানের নেটওয়ার্ককে হ্যাক করা সম্ভব নয় বলেই জানা গিয়েছে।


এই বিমান থেকে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে গোটা দুনিয়ার সঙ্গে কথা বলা যাবে। চালকের আসনে থাকবেন বায়ুসেনার পাইলট। দুটি বিমানের জন্য খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা


সম্প্রতি, বোয়িং এই বিমানের ভেতরের খোলনলচে পাল্টে ঢেলে সাজিয়েছে। বিমানে রয়েছে ভিভিআইপি-র জন্য একটি বড় স্যুইট বা কেবিন। ছোট মেডিক্যাল সেন্টার। সাংবাদিক সম্মেলন করার জায়গা। পিছন দিকের আসনগুলি ইকনমি শ্রেণি হলেও তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক। সামনের দিকে বিজনেস ক্লাসের।


মার্কিন প্রেসিডেন্টের এয়ার ফোর্স ওয়ানের ধাঁচেই এবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য সুরক্ষিত, অত্যাধুনিক বিমান তৈরি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই বিমান টানা ১৭ ঘণ্টা ধরে উড়তে পারবে। মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরতেও সক্ষম এই বিমান।


বিশ্বের সবথেকে সুরক্ষিত এই বিমানকে মাটিতে নামানো প্রায় অসম্ভব। এমনকি পরমাণু হামলাও একে ঘায়েল করতে পারবে না। বোয়িং ট্রিপল সেভেনকে অভেদ্য করে তুলতে বিমানের সামনে লাগানো থাকে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) জ্যামার, যা শত্রুপক্ষের রেডার বা ইলেকট্রনিক সিগনালকে অকেজো করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।


বিমান লক্ষ্য করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি আঁচ করার জন্য পিছনে লাগানো থাকে মিসাইল অ্যাপ্রোচ সিস্টেম। যা শত্রুপক্ষের আক্রমণ সম্পর্কে পাইলটকে আগাম সতর্ক করে।


বিমানের ডানায় লাগানো থাকে ফ্লেয়ার্স, এর থেকে বেরনো তাপ, যে কোনও মিসাইলকে বিপথগামী করে দিতে পারে। এধরনের বিমানে থাকে মিরর বল সিস্টেম। যা অকেজো করে ইনফ্রারেড সিগনালকে।