রায়পুর: ২০০৫ সালে কাকাকে পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন করার অপরাধে ১৫ বছর ৫ মাস জেল খেটে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার উত্তেজনায় তর সইছিল না আনন্দ নাগেশিয়ার। জেলে ভাল ব্যবহার করায় আগাম মুক্তি পেয়েছেন তিনি। সবচেয়ে বেশি কৌতূহল ছিল,  তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সময় মাত্র এক বছর বয়স ছিল যে মেয়ের, সেই যামিনী কতটা বড় হয়েছে, কেমন আছে, কী করছে! কিন্তু বাড়ি ফিরেই ৪০ বছরের নাগেশের মনটা খারাপ হয়ে  যায়। কেননা মেয়ে হিমসিম খাচ্ছে। ঘরে মোবাইল ফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না সে, পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে। তখন  উত্তর ছত্তিশগড়ের অম্বিকাপুরের আমধারা গ্রামের নাগেশিয়া কী করলেন, জানেন? শুনলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের দোকানে ছুটলেন তিনি। জেলে কয়েদি হিসাবে এতদিন থেকে কাজকর্ম করে ভাতাবাবদ পাওয়া টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য় কিনলেন একটা স্মার্টফোন।  মেয়ে সরকারি স্কুলের ১২ বছরের ছাত্রী।


নাগেশিয়া বলেছেন, মেয়ে  যখন বলল অনলাইন ক্লাস করার কোনও মোবাইল বা ওই ধরনের কিছু নেই, খুব কষ্ট হয়। ওর ডাক্তার হয়ে মানবসেবার স্বপ্ন। ডাক্তারি করতে চায়। আর জেলে থাকার সময় আমি উপলব্ধি করেছি, পড়াশোনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ওর স্বপ্নপূরণে যাতে কোনও বাধা না আসে, সেটা সুনিশ্চিত করতে আমার চেষ্টার খামতি থাকবে না।

অম্বিকাপুর  সেন্ট্রাল জেলের সুপার রাজেন্দ্র গায়কোয়াড় জানিয়েছেন, ও সহ ১৯জনের নাম সরকারের কাছে পাঠিয়ে সুপারিশ করা হয়, সামগ্রিকভাবে জেল খাটার সময় ভাল আচরণ করায় সাজা কমিয়ে আগে ছেড়ে দেওয়া  হোক ওদের। সারা জীবন জেল খাটার সাজাপ্রাপ্ত নাগেশিয়াকে দেখেছি একেবারে বদলে গিয়েছে। ভাল মানুষ হয়ে উঠেছে। তাই ওকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নাগেশিয়ার মেয়েকে নিজের আয়ের টাকায় স্মার্টফোন কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ভূয়সী  প্রশংসা করে গায়কোয়াড় জানিয়েছেন, উনি পরিবারের মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে একটা উদাহরণ তৈরি করলেন। জেলের কয়েদিরা আধা দক্ষ শ্রমের জন্য দিনে ৬০ টাকা, স্কিলড শ্রমের জন্য ৭৫ টাকা করে ইনসেনটিভ পান। আগে এই টাকার পরিমাণ অনেক কম ছিল, ক্রমশ বেড়েছে। ও পুরো টাকাটাই একটা ভাল কাজে খরচ করল।

জেলে থাকাকালে নাগেশিয়া বাগান করা, প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনায় ছুতোরের কাজ শেখেন। তিনি বলেছেন, দুই ভাই সহ আমাদের পরিবারের ৩ একর চাষের জমি আছে। সেখানে হর্টিকালচারের কাজ করে নিশ্চিত আয়ের ব্যবস্থা করব, এমনটাই ভাবছি।