ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, সুনীত হালদার, অরিন্দম সেন, বালেশ্বর: কাজের খোঁজে তিন বন্ধুকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। ভাগ্য অন্বেষণে। শালিমার থেকে ট্রেনে ওঠার আগে মাকে ফোন করে বলেছিলেন, 'মা, খেয়ে নিও, ট্রেনে উঠলাম।' সেই শেষ কথা। তারপর থেকে ফোন বেজে যাচ্ছে... উত্তর নেই। অনর্গল ফোন আসছে বাড়ি থেকে... প্রিয়জনেদের থেকে। কোথায় বছর বাইশের সুমিত মালিক? চেন্নাই যাবেন বলে সুমিত যে ট্রেনে উঠেছিলেন তিন বন্ধুর সঙ্গে, সেই ট্রেন এখন দুমড়ে, মুচড়ে দলা পাকিয়ে পড়ে রয়েছে বাহানাগা বাজারের লাইনে।


বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় বাংলাতেও মৃত্যুমিছিল। এখনও খোঁজ মিলছে না অনেকের। বীরভূম থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, অনেকেই সেই অভিশপ্ত রাতে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। প্রিয়জনের খোঁজে দিশেহারা পরিবার।


শয়ে শয়ে মৃতদেহের স্তূপ। চারিদিকে শুধু আর্তনাদ আর হাহাকার। বালেশ্বরের দুর্ঘটনার বীভৎস ছবি কার্যত ঘুম কেড়ে নিয়েছে গোটা দেশবাসীর। কেউ কাজের খোঁজে, তো কেউ চিকিৎসার জন্য রওনা দিয়েছিলেন, শুক্রবারের সেই সন্ধ্যায়। কিন্তু এখন তাঁদের পরিজনরা কোথায় কী অবস্থায় আছেন কিছুই জানে না পরিবার।


বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা শান্ত শেখ। বড় টানাটানির সংসার ছিল, তাই মেয়ের বিয়ের আগে রোজগারের আশায় চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন সেদিন। পথেই সব লন্ডভন্ড। দুর্ঘটনার পর থেকে তার কোনও খোঁজ নেই। চোখের জলে ভাসাচ্ছে পরিবার। তাঁর সঙ্গেই শুক্রবার করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়েছিলেন মুরারইয়ের কনকপুর গ্রামের বাসিন্দা, সানাউলা শেখ ও রফিকুল শেখ। তাঁদেরও কোনও খোঁজ মেলেনি। 


হাওড়া জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা বছর বাইশের সুমিত মালিক, চেন্নাই যাচ্ছিলেন ভাগ্য ফেরাতে। কিন্তু ভাগ্যের ফেরেই সব এলোমেলো হয়ে গেল। কাজের খোঁজে ৩ বন্ধুকে নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে রওনা দেন সুমিত। তিন বন্ধুর খোঁজ মিললেও সুমিত কোথায় কীভাবে রয়েছেন তা এখনও জানে না তাঁর পরিবার। সুমিতের মা বলছেন, 'শেষবার ছেলে ফোন করে বলেছিল, 'মা খেয়ে নিও, ট্রেনে উঠছি।' তারপর থেকে ফোন বেজে যাচ্ছে.. আমার ছেলে কোথায় জানি না। ওর বন্ধুদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু সুমিত....' কথা শেষ না করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। 


অন্যদিকে, যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী, জগৎব্লভপুরের জাহাঙ্গির মিদ্দা (বয়স- ৪২) ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথ চেয়ে বসে ছিল পরিবার। কিন্তু অপেক্ষাই সার। এখনও বাড়ি ফেরেননি জাহাঙ্গির। তাঁর সঙ্গী গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি বালেশ্বরের হাসপাতালে।কিন্তু জাহাঙ্গির কোথায়, তা এখনও জানতে পারেনি পরিবার।


মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের বাসিন্দা শম্ভু চৌধুরী বেঙ্গালোরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। প্রায় ১ বছর পর বাড়ি ফিরছিলেন ডাউন যশবন্তপুর হাওড়া এক্সপ্রেসে করে। দুর্ঘটনার পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও হদিশ পায়নি পরিবার। শম্ভুর খোঁজে রবিবার, স্পেশাল ট্রেনে করে বালেশ্বর পৌঁছন তাঁর আত্মীয়। পুরুলিয়ার জেলাশাসক জানিয়েছেন, ওই জেলার ২০ জন দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ৬ জন এখনও নিখোঁজ।