গুয়াহাটি: ভারতে করোনা আক্রান্ত লক্ষ ৪৩ লক্ষের বেশি। অসমেও হু-হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। একের পর এক করোনা আক্রান্তে মৃত ব্যক্তিকে দাহ করতে করতে ক্লান্ত বোধ করছেন মোরিগাঁও জেলার জাজিরোডের বাসিন্দা রামানন্দ সরকার। এপ্রিল থেকে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪০০ জন করোনা সংক্রমণে মৃতের সৎকার করেছেন তিনি।


গত কয়েক সপ্তাহে অসমে যে শুধু করোনা সংক্রমণ বেড়েছে তা নয়, মৃত্যুও বাড়ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১,৩০,৮২৩। মারা গিয়েছেন ৩৭৮ জন।


গুয়াহাটির পরিস্থিতিও ভাল নয়। প্রতিদিন ৫০০-৬০০ জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। গুয়াহাটির উলুবাড়ি ক্রিমেটোরিয়ামের কর্মী রামানন্দের কথায়, ’’এপ্রিল থেকে আমি করোনা আক্রান্তের সৎকার করছি।


এখনও পর্যন্ত করোনার কারণে মৃত ৪০০ জনকে দাহ করেছি। আর পারছি না। আমি ক্লান্ত। আগে দিনে এক বা দুটি দেহ আসত। এখন দিনে ১০-১২টি করে দেহ আসছে।‘‘


জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এপ্রিল থেকে চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধু উলুবাড়ি ক্রিমেটোরিয়ামে ৪০০ জন করোনা রোগীর সৎকার হয়েছে। কিছু দেহের সৎকার অবশ্য ভুতনাথ ক্রিমেটোরিয়ামে হয়েছে। ৭২ জনকে দাহ করা হয়েছে গুয়াহাটির অন্যত্র।


উলুবাড়ি ক্রিমেটোরিয়ামে রামানন্দ ও তাঁর দুই সঙ্গী দুপুর ২টো-৩টে থেকে দাহ করা শুরু করেন। তা চলে রাত ২টো-৩টে পর্যন্ত। একের পর এক সৎকার চলতেই থাকে।


বছর দুয়েক আগে গ্রাম থেকে গুয়াহাটি আসেন রামানন্দ। প্রথমে তিনি ভুতনাথ ক্রিমেটোরিয়ামে কাজ করতেন। পরে তাকে উলুবাড়ি ক্রিমেটোরিয়ামে স্থানান্তরিত করে জেলা প্রশাসন।


সরকারি খরচে একটি হোটেলে বর্তমানে রয়েছেন রামানন্দ। যেহেতু করোনা আক্রান্তের সৎকার্যের সঙ্গে তিনি যুক্ত, তাই একাধিকবার করোনা পরীক্ষা হয়েছে তাঁর।


করোনা আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে অসমে। মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে ৩৭৮ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও, এই পরিসংখ্যানে কো-মর্বিডিটির ফলে মৃতদের রাখা হয়নি।


এমনও খবর ছড়িয়ে পড়ে, যে লোকের অভাবে মর্গে করোনা সংক্রমিতের দেহের পাহাড় জমছে। কিন্তু একথা ঠিক করোনা আক্রান্তের সৎকার প্রশাসনের কাছে এক অন্যতম চ্যালেঞ্জ।


কামরূপ মেট্রো অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করোনা সংক্রমিতের সৎকার্য নিয়ে বেশ কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। ডিউটি আওয়ার্স পেরিয়ে গেলেও কর্মীরা কাজ করে চলেছেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন গুয়াহাটির জিএনআরসি হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক নভনীল বড়ুয়া।


তবে লোকের অভাবে সৎকার্যে দেরি হওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কামরূপ মেট্রো পলিটনের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার চিন্ময় নাথ। তিনি বলেছেন, ’’দিনে ১০-১৫ জনকে করোনা আক্রান্তকে দাহ করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে তাদের। তবে অনেক সময় বেসরকারি হাসাপাতালে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর খবর আসতে দেরি হচ্ছে বলে প্রক্রিয়া কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে।‘‘