রঞ্জিত সাউ, মধ্যমগ্রাম: পরিবারকে বাঁচাতে ৩ দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলেন মধ্যমগ্রামের এক যুবক। করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরেো বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি করেনি বলে অভিযোগ। ওই যুবক আর বাড়ি ফেরেননি, ধরেননি পরিজনদের ফোনও।


তিরিশ-বত্রিশ বছরের ওই যুবকের নাম জয়ন্ত রায়। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত সল্টলেক সিটি সেন্টারের পার্কিংয়ে কাজ করেন। কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি, কাশিও হয়েছিল। এ মাসের শুরুতে অসুস্থ হওয়ার পরেই বাড়ি ছেড়ে তিনি চলে যান মধ্যমগ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি। বিধাননগর সাবডিভিশন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করান। এরপর শরীর আরও খারাপ হলে ভর্তি হতে যান বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। কিন্তু তারা জানায়, করোনা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ভর্তি করা যাবে না। এরপর ৮ তারিখ জয়ন্ত বিধাননগর হাসপাতালে রিপোর্ট আনতে যান, দেখেন, তিনি করোনা পজিটিভ। রাতে স্বাস্থ্য দফতর তাঁর দাদা সুশান্তকে ফোন করে বলে, তাঁর ভাইয়ের করোনা হয়েছে।

করোনা পজিটিভ জানার পর থেকেই জয়ন্ত আর বাড়ি ফেরেননি। চলে যান সল্টলেকে। রাস্তায় রাতটা কাটিয়ে পরদিন রিপোর্ট হাতে ফের বেলেঘাটা আইডিতে যান। কিন্তু এবার তারা বলে, স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো তালিকায় তাঁর নাম নেই, তাই ভর্তি করা যাবে না। তিনি যান বেলেঘাটার নন্দীহাউস থানায়। তারাও তাঁকে ফিরিয়ে দেয়, বলে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি পবিত্র বিশ্বাসের কাছে যেতে।

এরপর থেকে জয়ন্তের আর খোঁজ মিলছিল না। বাড়ির লোক ফোন করলে ফোন ধরছিলেন না তিনি। ঘুরছিলেন সল্টলেক, দত্তাবাদের রাস্তায় রাস্তায়, রাতও কাটাচ্ছিলেন সেখানে। এরপর গতকাল সকালে দাদাকে ফোন করে তিনি বলেন, শরীর আরও খারাপ হয়েছে, বোধহয় বাঁচবেন না। তাঁর দাদা যোগাযোগ করেন স্থানীয় বিধায়ক, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর সঙ্গে। তিনি বিধাননগর পুরসভার পাশে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি নির্মল দত্তকে জানান, সল্টলেক দত্তাবাদের পাশে বাইপাসের ধারে করোনায় আক্রান্ত এক যুবক শুয়ে আছেন।

এরপর নির্মল দত্ত পুলিশ ও জয়ন্তের দাদাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান, জয়ন্তকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজারহাট চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালে পাঠানো হয়। জয়ন্ত জানিয়েছেন, পরিবারের লোকজনকে বাঁচাতে তিনি এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন। কিন্তু এর ফলে আরও কত মানুষ তাঁর সংস্পর্শে এসে করোনা আক্রান্ত হলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।