কলকাতা: করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশেষ উদ্যোগ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে হাসপাতালগুলিতে আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে সেখানে ৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তৈরি করতে হবে। দলে থাকবেন শিশুরোগ, মেডিসিন ,ফুসফুস, ইএনটি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আলাদা ফিভার ক্লিনিক তৈরি হবে। করোনা আক্রান্তদের জন্য তৈরি করতে হবে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড। সম্ভব হলে আইসোলেশন সিসিইউ বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট তৈরি করতে হবে।
সাধারণ সিসিইউ-তে কোনওভাবেই করোনা সন্দেহে আক্রান্তদের ভর্তি করা যাবে না। নতুন তিনটি করো না পরীক্ষা কেন্দ্র চালু হতে চলেছে মেদিনীপুর, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন ছাড়াও দ্রুত মালদা এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি রোগীদের ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য হাসপাতালে আলাদা বিল্ডিং বা ফাঁকা বিল্ডিংয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সমস্ত চিকিত্সক ও নার্সদের ছুটিও বাতিল করা হতে পারে।
এখন দেখে নেওয়া যাক শহর কলকাতার করোনার সালতামামি....
হোম কোয়ারান্টিনে কলকাতা বিমানবন্দরের দুই অফিসার
কলকাতা বিমানবন্দরে কর্মরত অভিবাসন দফতরের দুই অফিসারকে পাঠানো হল হোম কোয়ারেন্টিনে। সূত্রের খবর, রাজ্যের উচ্চপদস্থ আমলার করোনা আক্রান্ত ছেলের সংস্পর্শে আসায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই সিদ্ধান্ত।
১৫ মার্চ, কলকাতায় ফেরেন ইংল্যান্ড ফেরত তরুণ। পরে তাঁর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওইদিন বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অভিবাসন দফতরের দুই অফিসার। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ১৪ দিন তাঁদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এদিকে, আক্রান্ত তরুণের বাড়ির দুই পরিচারিকার রিপোর্ট আসবে আজ। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁদের আইডি হাসপাতালেই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনা আবহে সতর্ক রাজ্যের মন্ত্রীরাও
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিজেই দিচ্ছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। অন্যদিকে, খাদ্য ভবনেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। চলছে জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া। নিজে সেই কাজ তদারকি করছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
আক্রান্ত সন্দেহে এনআরএসে আইসোলেশনে ডাক্তারি পড়ুয়া
করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এনআরএসে আইসোলেশনে ডাক্তারি পড়ুয়া। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের ওই পড়ুয়া সম্প্রতি কেরলের বাড়ি থেকে ফেরেন। ফেরার পরেই জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন ওই ডাক্তারি পড়ুয়া। তাঁকে পরীক্ষা করে পাঠানো হয় এনআরএসের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। ওই পড়ুয়ার রুমমেটকেও আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। দু জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হবে নাইসেডে।
কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৫ জন
এদিকে, করোনা-সন্দেহে এ পর্যন্ত কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২৫ জন। এদের মধ্যে আরজি করে ২ জন ও এনআরএসে ২ জন ভর্তি। নতুন করে বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৯৮ জনকে। গতকাল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে ১৭ হাজার ৮২৪ জন। এদিকে, মেডিক্যাল টেস্টের জন্য উপচে পড়া ভিড় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
সঙ্কটাপন্ন রোগীদের দেখতে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় এবার সঙ্কটাপন্ন রোগীদের দেখতে আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের গেটে বসানো হচ্ছে থার্মাল স্ক্যানার। প্রবেশ পথে স্ক্যানার বসিয়ে হাসপাতালে আসা ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হবে। শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে, তাঁদের আলাদা গেট দিয়ে ঢোকানো হবে। বাকিরা হাসপাতালে ঢুকবেন আলাদা গেট দিয়ে। সিসিইউ, আইসিইউ, এসএনসিইউ সহ সঙ্কটাপন্ন রোগীরা যে সমস্ত বিভাগে ভর্তি, তাঁদের সঙ্গে আপাতত দেখা করতে পারবেন না আত্মীয়-পরিজনেরা। জেনারেল ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়রা দিনে মাত্র একবার দেখা করতে পারবেন।
এনআরএসে আউটডোরে উত্তেজনা
রাজ্যে করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলতেই কলকাতার হাসপাতালে ধরা পড়ল বিভিন্ন ছবি। এনআরএসে আউটডোরে কাজ বন্ধ করে দেন অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকেরা। রোগীদের আগে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করিয়ে আসতে হবে। দাবি ওই চিকিৎসকদের। এনিয়ে হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় শুনসান এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর। রোগী ও তাঁর আত্মীয়-পরিজনদের ভিড় নেই। অন্যদিনের তুলনায় অনেকটাই ফাঁকা আউটডোর।
দেশে ফিরলেন প্রসেনজিৎ-সৃজিত
করোনা আবহে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শ্যুটিং শেষে দেশে ফিরলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। এদিন দুবাই থেকে ২৩৫ জন যাত্রী কলকাতায় ফেরেন। এই দলে ছিলেন প্রসেনজিৎ-সৃজিতও। দুবাই ফেরত ৩৫ জন যাত্রীকে করোনা-সন্দেহে আলাদা বাসে করে রাজারহাটের কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করতে হুড়োহুড়ি
করোনা আবহে বাড়ছে দোকান-বাজার বন্ধের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বাড়িতে মজুত রাখতে চাইছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। দোকান-বাজারে ভিড়। ছড়াচ্ছে গুজবও। শিয়ালদার কোলে মার্কেট এবং নিউ মার্কেট বন্ধ হয়ে যাবে বলে বহু মানুষের আশঙ্কা। যদিও প্রশাসন সূত্রে এই খবরের কোনও সত্যতা মেলেনি।