রাইপুর: স্কুলে পড়ুয়াদের দৈহিক শাস্তিপ্রদানকে নিষ্ঠুরতার পরিচয় বলল ছত্তীসগঢ় হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, শৃঙ্খলার নামে শিশুদের দৈহিক শাস্তিপ্রদান কাম্য নয়। এক পড়ুয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলার শুনানি চলছিল। সেই মামলার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা। তাঁদের আবেদন খারিজ করে দিল আদালত। (Chhattisgarh High Court)


ছত্তীসগঢ় হাইকোর্টের বিচারপতি রবীন্দ্রকুমার আগরওয়াল অভিযুক্ত মহিলা শিক্ষিকার আবেদন শুনছিলেন। শুনানি চলাকালীন বিচারতি জানান, দৈহিক শাস্তি কখনও শিক্ষার অংশ হতে পারে না। শৃঙ্খলার নামে কোনও পড়ুয়াকে দৈহিক শাস্তি দেওয়া কাম্য নয়। তিনি বলেন, "সংবিধানের ২১ বং অনুচ্ছেদে জীবনের অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। শিশুর উপর দৈহিক শাস্তি আরোপ সেই আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।" (Corporal Punishment in School)


আদালত জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক নয় বলে, ছোট বলে কোনও শিশুকে মানুষ বলে মনে করা হবে না, এমনটা চলতে পারে না। জীবনের অধিকার বলতে বোঝায়, সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার, জীবনকে অর্থবহ করে তোলা। শুধুমাত্র বাঁচতে হয় বলে বেঁচে থাকা নয়, পশুর মতো বেঁচে থাকা নয়। যা কিছু মর্যাদাপূর্ণ, তাকে গ্রহণ করা। 


আরও পড়ুন: World Bank Report: আমেরিকার মাথাপিছু আয়ের এক চতুর্থাংশে পৌঁছতে ৭৫ বছর লাগবে ভারতের, চিনের ১০ বছর: বিশ্ব ব্যাঙ্ক


ছত্তীসগঢ়ের সরগুজা জেলার অম্বিকাপুরের কারমেল কনভেন্ট স্কুলের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের হয়। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মণিপুর থানায় এফআইআর দায়ের হয়, যাতে সিস্টার মার্সি ওরফে এলিজাবেথ হোসের নামে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী সুইসাইড নোটে হেনস্থার কথা লিখে যায়। সুইসাইড নোটে শিক্ষিকার নামের উল্লেখও ছিল।


অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে আগেই হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ। তাঁর আইনজীবী আদালতে জানান, শৃঙ্খলারক্ষার স্বার্থে ওই পড়ুয়ার পরিচয়পত্র জমা রেখে, তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন মাত্র ওই শিক্ষিকা। ওই পড়ুয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার কোনও রকম অভিসন্ধি ছিল না অভিযুক্তের। কোনও রকম তদন্ত ছাড়াই, শুধুমাত্র সুইসাইড নোটের উপর ভিত্তি করে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে। 


কিন্তু নিহত ছাত্রীর পরিবারের আইনজীবী জানান, শুধুমাত্র সুইসাইড নোটের উপর ভিত্তি করে এফআইআর দায়ের করা হয়নি। স্কুলের অন্য পড়ুয়াদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সকলেই জানান, ওই শিক্ষিকা এতটাই নিষ্ঠুর যে, সকলেই সিঁটিয়ে থাকে। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে অনেক পড়ুয়া। এর পরই আদালত ওই শিক্ষিকার আবেদনপত্র খারিজ করে দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর তুলে নেওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানায় আদালত। আদালত জানায়, শিশুরা দেশের সম্পদ। তাঁদের সযত্নে লালন করা উচিত। কোনও রকম নিষ্ঠুরতা কাম্য নয়।