ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা: সাধারণ মানুষ মজে নির্বাচনে। প্রতিদিন সব রাজনৈতিক দলের সভায় হাজার হাজার ভিড়। আর এরইমাঝে সবার অলক্ষে ফের থাবা বসাতে শুরু করেছে করোনা। চিকিত্সকদের একটা বড় অংশ বলছে, ভারতে আছড়ে পড়েছে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ বা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে গেছে ভারতে। চিকিত্সকরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা বলছেন রাজ্যেও সংক্রমণ বাড়ছে। আগে শহরে ছিল, এখন গ্রামে হচ্ছে ৷ গত বছরের শেষ দিকে বাড়তে বাড়তে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, দৈনিক প্রায় এক লক্ষের গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলেছিল একসময়। এরপর নতুন বছরের প্রথম থেকেই ধীরে ধীরে কমতে থাকে সংক্রমণ। এরইমধ্যে জোরালভাবে শুরু হয়েছে ভোট প্রচার!
হেলিকপ্টার উড়ছে, নামছে ৷ সব দলের সব হেভিওয়েটরাই এখন ভোটে মজে ৷ সভার পর সভা ৷ কোভিড বিধি হাওয়া। শারীরিক দূরত্ব এখন ইতিহাস! মাস্ক? সেটা আবার কী জিনিস? আর এই সুযোগে হঠাত্ই বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার ছুঁইছুঁই। মৃতের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। ১ মার্চ দেশে ১০৬ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সংখ্যাই বাড়তে বাড়তে মঙ্গলবার প্রায় ২০০তে পৌঁছে গিয়েছে। চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর মতে, ‘‘কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ। মানুষ গুরুত্ব দিতে চাইছে না। কিন্তু দিতে হবে। বিধি সবাই জানেন।’’
পরিসংখ্যান বলছে, ভোটমুখী বাংলাতেও ফের করোনা পরিস্থিতি গুটি গুটি পায়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে। পয়লা ফেব্রুয়ারি যেখানে রাজ্যে ১৭৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। সেখানে সোমবার অর্থাৎ ২২ মার্চ একলাফে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৩৬৮। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক বলেন, ‘‘আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আরও বাড়বে। আমাদের রাজ্যেও বাড়ার ইঙ্গিত রয়েছে। এবারের টা বেশি ছড়াচ্ছে। সবাই যেন ন্যূনতম মাস্ক পরে। নেতারা যেন মাস্ক পরতে বলেন।’’
কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিস্থিতি ফের খারাপ হতে শুরু করেছে। এর উপর আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে চিকিত্সকরা বলছেন, এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনামূলক শক্তিশালী স্ট্রেইন দেখা দিয়েছে। কলকাতার বেলেঘাটা আইডিতে এই মুহূর্তে ২৩ জন করোনা আক্রান্ত চিকিত্সাধীন। তাঁদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ করোনা স্ট্রেইনে আক্রান্ত। বেলেঘাটা আইডির ভাইস প্রিন্সিপাল আশিস মান্না বলেন, ‘‘২ হাজারের বেশি কোভিভ রোগীর চিকিত্সা হয়েছে। অধিকাংশকে বাঁচিয়েছি। ১৫ জনের মধ্যে ইউকে, সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেনের চিকিত্সা করা হয়েছে। পুকুরে যেমন ঢিল পড়লে যেমন হয়, সেরকম ছড়াবে। কীরকম ছড়াবে বোঝাই যাচ্ছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সকলকে মাস্ক, হাত ধোঁয়ার পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে।’’
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন কয়েকজন চিকিত্সক। তাঁদের আবেদন, করোনার এই পরিস্থিতিতে কেন ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে না, তা নির্বাচন কমিশনের কাছে জবাব তলব করুক আদালত। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি সুস্পষ্ট গাইডলাইনও প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে।