সন্দীপ সরকার, কলকাতা: রাজ্যে ভয়ঙ্কর হচ্ছে করোনার সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজ্যে ভ্যাকসিনের আকাল। কলকাতার বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে বন্ধ করা হয়েছে ভ্যাকসিনেশন। সোমবার রাজ্যে এসেছে ৪ লক্ষ কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন। বুধবার রাজ্যে আসবে আরও ৩ লক্ষ ভ্যাকসিন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে কোভিড বেডেরও।
রাজ্যে চলছে ভোট উৎসব। করোনা আবহে রাজনৈতিক দলগুলির হাজার হাজার ভিড়। আর এরই মধ্যে গোটা দেশের মতোই রাজ্যেও ভয়ঙ্কর করোনা।এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ভ্যাকসিনের আকাল। বহু ভ্যাকসিনেশন সেন্টারেই মজুত নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন।
শনিবার থেকে কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে লাগানো হয়েছে ‘নো ভ্যাকসিন’ নোটিস। সোমবারও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের ভাঁড়ার শূন্য। এরমধ্যে রয়েছে আমরি মুকুন্দপুর,আমরি সল্টলেক,বেলভিউ ক্লিনিক,আরএন টেগোর হাসপাতাল
আমরি গ্রুপের সিইও রূপক বড়ুয়া বলেছেন, ভ্যাকসিন নেই তাই হচ্ছে না । আমরা সরকারের ওপর নির্ভরশীল। স্বাস্থ্যভবনকে জানানো হয়েছে।
একদিকে লাগামছাড়া করোনা, অন্যদিকে ভ্যাকসিনের আকালের ভ্রুকুটি...এরইমধ্যে সামান্য হলেও স্বস্তি দিয়ে সোমবারই পুণে থেকে রাজ্যে এসে পৌঁছল কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ৪ লক্ষ ডোজ।
যদিও, স্বাস্থ্যভবন সূত্রে দাবি, যা ভ্যাকসিন এসেছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। দু একদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে।
এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী করোনা উৎসব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।পাল্টা করোনা সঙ্কট নিয়ে আরও একবার মোদি সরকারকে সতর্ক করেছেন রাহুল গান্ধী।
প্রধানমন্ত্রী ১৮ দিনের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা মনে করিয়ে দিয়ে, কটাক্ষের সুরে রাহুল গান্ধী ট্যুইট করে ভিডিও বার্তায় বলেছেন,৩৮৫ দিনেও করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেতা হয়নি। উৎসব, থালা বাজানো, অনেক হয়েছে, এবার দেশকে ভ্যাকসিন দিন। আপনি ঘণ্টা বাজাতে বলেছেন, থালা বাজাতে বলেছেন, মোবাইল ফোনের চর্ট জ্বালাতে বলেছিলেন। করোনা কিন্তু বেড়েই চলেছে। এখন ইভেন্টবাজি বন্ধ করুন। যাঁদের প্রয়োজন তাঁদের সকলকে ভ্যাকসিন দিন। বিদেশে ভ্যাকসিন পাঠানো বন্ধ করুন। গরীবদের আর্থিক সাহায্য দিন।
উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক আবার ভ্যাকসিনের অভাবের অভিযোগ মানতে নারাজ।তাদের দাবি, পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনের যোগান দেওয়া হচ্ছে।কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, সারা বিশ্বে দৈনিক ভিত্তিতে গড়ে ভ্যাকসিন দেওয়ার নিরিখে ভারত সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে।
এদিকে করোনা যখন সুনামির মতো আছড়ে পড়ছে, তখন বেডের প্রবল সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সোমবারের স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে ৪৪১টি কোভিড বেডের সব কটি ভর্তি। নিউটাউনে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে করোনার জন্য বরাদ্দ ১৫০টি বেডের একটিও খালি নেই। বেলেঘাটা আইডির ১৬৫টি বেডের মধ্যে মাত্র ২০টি বেড খালি।কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ৩০০টি কোভিড বেডের মধ্যে প্রায় সবকটিই ভর্তি।এনআরএসে ১১০টি কোভিড বেডের মধ্যে প্রায় সবকটিই ভর্তি।
একই অবস্থা কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলিরও। সিএমআরআই-এ ১৩৩টি কোভিড বেডের প্রায় সবকটিতে রোগী ভর্তি । ঢাকুরিয়া আমরির ৮৯,মুকুন্দপুর আমরির ৩৩,সল্টলেক আমরির ২৪,বেলভিউ ক্লিনিকের ১১৪, ডিসানে ১৬০,ফর্টিসে ৬৮,মেডিকায় ১৬২,আরএন টেগোর হাসপাতালে ৭৩, ও পিয়ারলেসের ১২৯ কোভিড বেডের প্রায় সবকটি ভর্তি।