ওয়াশিংটন: এবার অন্য প্রাণীর দেহেও হানা দিতে শুরু করেছে কোভিড ভাইরাস। মার্কিন যুক্তরাষ্টের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। যেখানে সাদা লেজের হরিণের দেহে পাওয়া গিয়েছে কোভিডের অ্যান্টিবডি। স্বাভাবিকভাবেই এই তথ্য চিন্তা বাড়িয়েছে বিজ্ঞানীদের।


মার্কিন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দেশের উত্তর পূর্বে বিশেষ প্রজাতির হরিণের দেহে কোভিডের অ্যান্টিবডি রয়েছে। তবে সব হরিণের শরীরে ধরা পড়েনি এই চিত্র। ওই অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশ হরিণের দেহে SARS-CoV-2 অ্যান্ডিবডি পাওয়া গিয়েছে। মহামারী শুরু হতেই কোভিডের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাণীদের মধ্যে কার দেহে এই ভাইরাস হানা দিতে পারে , তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন গবেষকরা।


এই গবেষণায় প্রথমেই বেছে নেওয়া হয় সাদা লেজের হরিণকে। Odocoileus virginianus নামের হরিণ নিয়ে শুরু হয় চর্চা। দেখা যায়, ওই হরিণের দেহে ভাইরাস আমন্ত্রণকারী রিসেপটরস রয়েছে। এরপরই শুরু হয় নমুনা পরীক্ষা। গবেষণায় উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হরিণের ৪০ শতাংশ নমুনায় পাওয়া যায় কোভিডের অ্যান্ডিবডি। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, কোনও না কোনওভাবে কোভিড ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে বিশেষ প্রজাতির ওই হরিণ। 


এ প্রসঙ্গে চিনের জিজিয়াং ইউনিভার্সিটির গবেষক আরন ইরভিং বলেন, ''এটা খুবই কৌতূহল জাগানো একটা পর্যবেক্ষণ। তবে এই নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া উচিত। খুব সাবধানে এর ব্যাখ্যা হওয়া প্রয়োজন।''


এ একেবারে ভাইরাসের জলাধার


তবে এই প্রথম বার নয়। অতীতেও ওই বিশেষ হরিণ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, ওই নির্দিষ্ট প্রজাতির হরিণের দেহে কোভিডের ভাইরাস ঢুকতে পারে। এমনকী ওই হরিণের থেকে অন্য হরিণেরও করোনা হতে পারে। গবেষকদের আশঙ্কা, মানুষ ভ্যাকসিন নিলেও এই হরিণের মাধ্যমে লুকিয়ে থাকবে করোনা ভাইরাস। পরবর্তীকালে অন্য প্রাণী হয়ে যা মানুষের দেহে ঢুকতে পারে। 


কোভিডের আশঙ্কা দূর করতে ৩৮৫টি বন্যপ্রাণীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীকালে দেখা যায়, এর মধ্যে ১৫২টি রক্তের নমুনায় কোভিডের অ্যান্টিবডি রয়েছে। মিসিগান, পেনসিলভানিয়া, ইলিনোইস থেকে নমুনা সংগ্রহ করার পর এই ছবি সামনে আসে।


প্রাণী দেহে সংক্রমণের ক্ষেত্রে এ কোনও নতুন ঘটনা নয়


অতীতেও প্রাণী দেহে কোভিডের অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার চিড়িয়াখানায় বাঘের দেহে কোভিডের অ্যান্ডিবডি পাওয়া যায়। জুলাইয়ে ৯ বছরের বাঘ রিনোর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নাক দিয়ে জল থামছিল না ওই বাঘের। হজম শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল সে। দু'দিন পর একই লক্ষণ দেখা যায় ১২ বছরের হরির। তড়িঘড়ি তাদের অ্যান্টিবায়োটিক ও মাল্টি ভিটামিন দেওয়া শুরু হয়। সুস্থ হতে ১০-১২ দিন সময় লাগে দুই বাঘের। আমাদের দেশেই কোভিড সংক্রমণের শিকার হয় হায়দরাবাদের নেহরু জুলজিক্যাল পার্কের দুই সিংহ। সেই প্রথম দেশে মানুষ 
থেকে কোনও পশুর দেহে কোভিডের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।