তিরুঅনন্তপুরম: এক ভাইরাসের জেরে স্বজনহারা হচ্ছে লাখো পরিবার। করোনার নাম শুনলেই আঁতকে উঠছে দেশ। সেখানে কোভিড ভাইরাসের কারণে মিলে গেল হারানো পরিবার। ৩৩ বছর পর জেলবন্দি বাবাকে দেখতে পেল মেয়ে।
জন্মের পর থেকেই তাঁর সান্নিধ্য পায়নি মেয়ে। ইতিউতি আত্মীয়দের মুখে শুনেছে একটা নাম। ছোট থাকতে বুঝতে পারেনি সেই তাঁর বাবা। বোধ-বুদ্ধি হতেই মেয়ে জানতে পারে, খুনের অপরাধে জেলবন্দি রয়েছেন বাবা। সেই থেকেই বাবার সঙ্গে সাক্ষাতের আকুতি। সম্প্রতি কোভিডের কারণে জেলবন্দিদের প্যারোলে মুক্তি দিচ্ছে সরকার। কেরলেও যার ব্যতিক্রম হয়নি। করোনার কারণে ৩৩ বছর পর জেলবন্দি বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারল মেয়ে।
আর অজিতা জানিয়েছেন, ১৯৮৮ সালে জন্মাবার সময় গোপন স্থানে লুকিয়ে ছিলেন বাবা। কিছু মাস পরই খুনের অপরাধে গ্রেফতার হন তিনি। চার বার জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন বছর ৬৫-র শিবাজি। কিন্তু প্রতিবারই চেষ্টা বিফলে যায়। গারদের ওপারে চলে যেতে হয় তাঁকে। গত বারই কোভিডের সময় জেলবন্দিদের প্যারোলে মুক্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেবারও আশায় বুক বেঁধেছিলেন অজিতা। কিন্তু শেষমেশ তাঁর বাবাকে জেল থেকে ছাড়া হয়নি।
সংবাদ সংস্থা আইএএনএসকে সিপিআইএম কর্মী অজিতা বলেন, ''আমার বাবার সঙ্গে আলাপ্পুঝায় স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীর বচসা হয়েছিল। সেই সময় দুজনের সংঘর্ষে কংগ্রেস কর্মী গুরুতর আহত হন। পরে ১৯৮৫ সালে ফের দু-জনের হাতাহাতি হয়। যাতে কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু ঘটে। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান বাবা। সেই সময় নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। পরে গোপনে মাকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে খুনের অপরাধে বাবাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমি তখন মায়ের কোলে, সবে এক মাস।''
তবে এখানেই থমকে যায়নি জীবনের পথ চলা। আরও কিছু বাকি ছিল অজিতার জীবনে। বাবার জেলযাত্রার এক বছরের মধ্যেই আত্মহত্যা করেন মা। দাদুর বাড়িতে বেড়ে ওঠেন তিনি। পরে আত্মীয়দের কাছে জানতে পারেন, বাবা বেঁচে আছেন। অজিতা জানান, জেলবন্দিদের অনুষ্ঠান টিভিতে দেখেই প্রথমে বাবার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে জাগে তাঁর। সেই অনুযায়ী পলক্কারে সিপিআইএম নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন তাঁরা।
যদিও অজিতার অভিযোগ, তাঁর ও শিবাজির সাক্ষাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান প্রয়াত কংগ্রেস কর্মীর ছেলে। ঘটনাচক্রে যিনি এখন পুলিশে কর্মরত। বর্তমানে তিন সন্তানের মা অজিতা। স্বামী কোঝিকোড়ে একটা ফুড ইউনিটে কাজ করেন। সম্প্রতি শীর্ষ আদালত জেলবন্দিদের প্যারোলে মুক্তির কথা বলতেই পলক্করে ছুট লাগান তিনি। রাতেই ট্রেন ধরে বাবাকে নিয়ে আসেন বাড়িতে। তিন সন্তানের সঙ্গে বাবাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অজিতা।
নিয়ম অনুসারে এখন তিন মাসের প্যারোল দেওয়া হচ্ছে জেলবন্দিদের। এক-একটা দিন শেষ হতেই আনন্দের মাঝে দুঃস্বপ্ন গ্রাস করছে অজিতাকে। সময় এলেই ফের বাবাকে চলে যেতে হবে জেলে। ভাবতেই চোখ ভরে উঠছে জলে।